বুড়ো বয়সে ভীমরতি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে অনেক মতবাদ থাকলে থাকতে পারে। তবে আমি দুটো জিনিসের মধ্যেই বিশ্বাসী। তার আগে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে নিই।
আমাদের এলাকায় এক বুড়ো মানুষ আছেন। তিনি আবার সম্প্রতি হজ্ব করেছেন। তাঁর তিন ছেলে এক মেয়ে। ছোট ছেলে বাদে সবাই বিবাহিত। এবং সব ঘরেই নাতি-পুতি আছে।
দেশের বাড়ি বরিশাল। এলাকার ছেলেরা দেখলে সালাম দেয়,সম্ভবত হাজ্বি মানুষ বলে। দেড় মাসের বেশী হয়েছে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। যেদিন তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয় সেদিন তিনি হাসপাতালে স্ত্রীর শীয়রের পাশে বসে রয়েছেন।
যেই মূহুর্তে তিনি শুনতে পেলেন যে তাঁর স্ত্রী আর ইহদুনিয়ায় নেই,তখনি তিনি মূর্ছা গেলেন। ডাক্তার লাশ ফেলে আগে বৃদ্ধর সেবা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু তিনি তখন করুণ সুরে বিলাপ করে চলছেন,
-ওরে মোর খোদেজা, মোরে হালাইয়া তুই গেলি গা উরফের দিকে। মুই কি দোষ করছিলাম? ওই সাদেক ভূইয়ারে(খোদেজা বেগমের পিতা) মুই খারা কইরা বরিশালের ক্ষেতের ভিত্রে পুইত্যা না আইছি, তো মোর নাম ইকবাল খন্দকার না!
এভাবে চলল একটানা সাত-আট দিন কান্নাকাটি। তাঁকে দেখেই মনে হত যেন তাঁর দেহ হতে আত্না বেরিয়ে গেছে। প্রায় সময়ই “ও আমার খোদেজা” বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠতেন।
তারপর হঠাৎ দীর্ঘ দুই মাস তাঁর দেখা নেই। এ সময় তিনি কোথায় আছেন কিংবা কি করছেন তা সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম।
নিজেদের নিয়েই কুল পাই না,আবার অন্য মানুষের ব্যপারে খোজ-খবর নিব!
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যার সময় একটি মাইক্রোবাস এসে আমরা যে বিল্ডিং-এ থাকি তার সামনে এসে দাঁড়াল। মানুষজন বাইরে তেমন একটা নেই। আমি বারান্দা হতে বাইরে উকি দিয়ে দেখি সেই ইকবাল সাহেব নামছেন। তারপর যিনি নামলেন তাকে দেখে আমার ভুরু কুঁচকে উঠল। একজন বয়স্ক মহিলা,নববিবাহীতার ন্যায় লাল শাড়ি পরিহিতা।
পাশের বাড়ির এক আন্টি তখন ব্যপার দেখে ইকবাল সাহেবের কাছে এগিয়ে গেলেন। ইকবাল সাহেবের মুখে তখন বিস্তৃত চওড়া হাসি। সেই অবস্থায় তিনি সেই লাল শাড়ি পরিহিতাকে দেখিয়ে বললেন,
-আমার স্ত্রী।
ঘটনা আপাতত এখানেই শেষ। এরপর বলতে গেলে তাঁদের পারিবারিক জীবনের ঠুয়াঠুয়ির গল্প বলতে হবে যা কেমন হতে পারে সবাই জানে।
এ কাহিণীটা বলার উদ্দেশ্য হল যে বুড়ো বয়সে লোকে কেন বিয়ে করে। এর পক্ষে অনেকগুলো কারণ আছে।
যেমন হল এই একটি। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শেষ সময়ে বৃদ্ধরা নিজেদের অসহায় মনে করেন। স্ত্রী পাশে থাকলে অন্তত সুখ-দুঃখের ভাগীদার হিসেবে একজন পাওয়া যায়।
এছাড়া আমি আরেকটি ঘটনা শুনেছি। তার বর্ণনা দিতে গেলে কারেন্ট চলে যাবে। তাই সংক্ষিপ্তভাবে বলছি।
বৃদ্ধ নিজের স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বাসার কাজের মেয়ের সাথে মধ্যরাতের তান্ডবলীলায় লিপ্ত হতেন।
এর কারণ লোভ কিংবা যৌনস্বাদহীনতা যাই হোক না কেন এটাকে কেউ কিন্তু বয়সের দোষ বলতে পারবেন না।
বয়স বাড়ার পর মানুষের মনের অবচেতন একটা অংশের উপর মানুষের কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না। এ কারণে দেখবেন অনেক বৃদ্ধ লোক স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় না এনে যেখানে-সেখানে লুঙ্গি উঁচিয়ে লোকের সামনেই হয়তো বা রাস্তার মধ্যে পেশাব করে দিচ্ছেন।
এ একপ্রকার শিশুসুলভ আচরণ। এ নিয়ে হাসার কিছু নেই। আজ হতে ষাট(৬০) বছর পর (যদি আপনি আমি বেঁচে থাকি) তাহলে যে এরকমটাই ঘটবে না তা কি কেউ বলতে পারবে?
আমার মাঝে মাঝে মানুষকে প্রচন্ড ভালবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যখন আমি পৃথিবীর এই অসম্ভব নিষ্টূরতা দেখি তখন মনে হয় মানুষ হল পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ জাতি।
আমি চোখ বুজলেই দেখতে পাই যাদের সাথে আমার দেখা হয়,কথা হয়, কিংবা ব্লগিং হয় তারা আমার পাশে। আমরা একই মাঠ,হয়তো বা হাশরের মাঠে দাঁড়িয়ে আছি।
ভিজিট করুন http://www.blogvoice.tk
রাজনীতি,হলিউড কিংবা বলিউডের খবর জানতে চান? আজই ভিজিট করুন http://foulgossip.blogspot.com
আপনার লেখাটিও পাঠিয়ে দিন- arafat_bd@ymail.com