Saturday, March 20, 2010

বিএনপির পেটে আওয়ামীলীগের বাচ্চা!

স্থানঃ বসন্তের শুভ্র স্পর্শে কাতর নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলীয় দেশ,বাংলাদেশের একটি জনবহুল শহর, সম্ভবত ঢাকা হইবার তীব্র আশঙ্কা করি।
তথাকার সংসদ ভবনে রাতের গোল মিটিং চলিতেছে। উপস্থাপক,বক্তা কিংবা অতিথি বলিতে সর্বদা যে দুই ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ করা যায়,তাহারাই আজ আসিয়াছে। অন্য কোন সেবক,খাদক কিংবা চাটুকারদিগের কেহই নাই।
একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ এবং ভাবুক জনাব অমিত(আওয়ামীলীগ),চেহারা বুদ্ধিদীপ্ত এবং মেধার ঝিলিকের ন্যায়।
অপরজন মোটাসোটা,গোলগাল এবং মিষ্টি হাসির অধিকারী, পেশায় এডভোকেট,জনাব নয়ন(বিএনপি)।
আলোচনার শুরুতে প্রথমে চলিল কুরআন পাঠ,অতঃপর নিজের দলের প্রশংসার পূর্বে গলার রগ ফাটাইয়া অপর দলের কুকীর্তির সংক্ষিপ্ত এবং বিস্তারিত বয়ান।

অমিত এবং নয়নঃ দুই বন্ধু, তাহাদের শৈশব বড় মধুময়।
আট আনা লইয়া মার্বেল খেলিতে খেলিতে সারাবেলা পার করা,কিংবা হাটে যাওয়ার নাম করিয়া দুই বন্ধুর নৌকা সমেত নদ ভ্রুমণের কাহিণী হয়ত গাঁও-গেরামের লোকেরা ভুলিতে বসিয়াছে,কিন্তু তাহাদের এ বিষয়ে কোন প্রকার আপত্তি নাই।
গাঁয়ের লোকেরা অমিতকে চিনিত সিঁধেল চোর হিসেবে,আর নয়নকে চিনিত ধান্দাবাজ মিথ্যুক হিসেবে।
এ বিষয়ে নয়নের গুণ বেশী ছিল তাতে সন্দেহের অবকাশ নাই। সে লোকদের ধরিয়া তাতক্ষণিক কার্যক্রম দ্বারা বোকা বানাইয়া তাহাদের উদর তথা পকেট নিঃস্ব করিবার খেলাটি অতি চমৎকারের সহিত রপ্ত করিয়া লইয়াছিল।
যাহাই হোক,অনেক বছর ধরিয়া তাহাদের দেখা নাই। বড় হইবার পর হঠাৎ সেই আশ্চর্য শহরে দুইজন দুইজনকে চিনিয়া ফেলিল।
শহরখানি ধুলাময়, নিস্প্রাণ এবং নিষ্টুরতার কালি ক্রমাগত লেপণ করিতে করিতে ইহাতে কেমন যেন এক বিষাদ কালিমার ছায়া পড়িয়াছে। সেই ছায়া আবার মনুষ্যদের দখল করিয়া লইয়াছে। নতুবা কেহই বলিতে পারিত না যে মনুষ্য কোন প্রকার খারাপ জাত।
পল্টন মাঠে নয়ন হঠাৎ অমিতকে দেখিয়া লাফাইয়া জড়াইয়া ধরিল। খানিকক্ষণ আহ্বলাদিত গলায় একজন আরেকজনের পরিবার এবং সংসারের কথা জিজ্ঞাসিল। তারপর কি সমাচার জিজ্ঞাসা করিবা মাত্র দুইজনেরই ভিমরতী খাইবার অবস্থা হইল।
কারণ কিছুই নহে,অমিত আওয়ামীলীগের নেতা,আর নয়ন বিএনপির মন্ত্রী।
নয়ন বলিল, ওরে,সময় থাকতে তুই আমার কাছে চলে আয়। তুই দেখিস নি গতবার বিএনপি কি বিপুল ভোটে জয়লাভ করল। তোকে দেশ সেবার ভাল একটা পদে দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করে রাখব।
অমিত বলিল, তুই মিছেমিছি এই দলে পড়ে রয়েছিস। তুই আমার কাছে চলে আয়,দেখবি তোর জন্য আমি আমাদের দলের সবচেয়ে বড় নৌকা দিয়ে দিব। তোর টাকা-পয়সার কোন অভাব হবে না।
আর ধূর! বিরক্তি প্রকাশ করিল নয়ন।
এভাবে দলে টানাটানি কতক্ষণ চলিল তাহা বলা মুশকিল। তারপর যখন দুইজনেরই সুবুদ্ধির উদয় হইল যে দরকার হইলে তাহারা জীবনাত্না ত্যাগ করিবে,তবুও কেহই তাহার দল হতে বিন্দুমাত্র নড়িবে না।
তারপর হইতে দুই বন্ধুর এহেন নৈশ সাংসদিক গলা কাটাকাটি চলিতেছে। আজও তাহা যথাসময়ে শুরু হইল।
অমিত সাহেব আসন গ্রহণ করিয়া প্রথমে উপস্থিত বিরোধী দল ও নিজদলের প্রতি সালাম এবং জাতির নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিল(যদিও তিনি বাঁচিয়া নাই)। তারপর শুরু করিল,
-আওয়ামীলীগ সমৃদ্ধি এবং সম্পৃতি বজায় রাখবার জন্য একটি উপযুক্ত দল। কিন্তু, যেদিন হতে বিএনপির ওই জিয়াউর রহমান তাঁর কুটনীতি শুরু করলেন সেদিন হতে দেশটা যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছে।
-মাননীয় স্পীকার, (বাঁধা দিয়ে নয়ন সাহেব বলল) এখানে নিজের কার্যক্রমের বিবরণ না দিয়ে অপর দলকে গালাগালি করা হচ্ছে কেন?
স্পীকার সাহেব হাত তুলে থামিয়ে দিলেন নয়নকে। পুনরায় অমিতের বক্তব্য শুরু হল।
-জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার পর নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিলেন,তখন অনেক সামরিক কর্তারাই এই অন্যায় আবদার সহ্য করতে পারেন নি। তাঁরা এর বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে জিয়াউর রহমান ক্ষেপে যান। এই বিদ্রোহ দমন করতে তিনি ওই সমস্ত সামরিক লোকজন এবং কর্তাদের ক্যান্টনমেন্টের সামনে রাতের আঁধারে ফায়ারিং স্কোয়াডে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এ নৃশংস হত্যা কান্ডের সুষ্টু বিচার পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আনুমানিক শতাধিক লোকদের জিয়াউর রহমান ঐ রাতে হত্যা করেছিলেন।
-মাননীয় স্পীকার,(নয়ন সাহেবের চিৎকার) আমারও কিছু বলার আছে।
অনুমতি মিলায় নয়ন সাহেবও পূর্ণ উদ্যোমে নিজদলের গুণ কীর্তন শুরু করিল,তবে তার আগে আওয়ামীলীগের যাবতীয় গোমড় ফাঁস করিতে কৃপা বোধ করিল না।
-ভাই অমিত,আপনার জানার মধ্যে কিঞ্চিত ভুল আছে। বিএনপি কখনোই এরুপ অসৎকাজ কোনকালেই করার উদ্যেগ নেয় নাই। বিএনপির বিভিন্ন আন্তঃর্জাতিক এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম আজ জাতির নিকট প্রশংসিত। আর আওয়ামীলীগ,সেতো এক মহা চোরের দল। চোর না হলে কেউ এহেন কাজ করতে পারে তা ভাবাই যায় না। ছি ছিহ! শেখ মুজিবের মত মানুষ শেষ পর্যন্ত এই কান্ড করলেন। বুঝলেন,সবই ক্ষমতা আর টাকার লোভ। মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু যোদ্ধা শেখ মুজিবের কথামত কাজ করেনি। পরে এই সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে তিনি মেরেছেন,তা জানলে দেশের লোকতো ছি ছি করবেই। শুধু তাই নয়, মুজিব চেয়েছিলেন তিনি যেন স্বৈরাচার শাসক হতে পারেন। কিন্তু তাঁর এই পাকা ধানের মাচার উপর যারাই মই দিতে গিয়েছে তাদের সবাইকে গনহারে হত্যা করেছেন শেখ মুজিব। এই কথা বাইরের পৃথিবী শুনলে আওয়ামীলীগের মুখ বলে কিছু থাকবে?
-চোপ,হারামজাদা,(গাল দিয়ে উঠে অমিত) তোর বাপ-দাদা সবাই ছিল বিএনপির চামচা,তুইও হয়েছিস একটা খাস চামচ। তাই এইসব ফাঁকা বুলি ছেড়ে কাজ উদ্ধার করতে চাচ্ছিস!
নয়নও কম যায় না। সে বলে উঠল।
-চোপ বদমাইশের বাচ্চা,তোর মত নিজের খেয়ে পরের মহিষ তাড়ানোর লোক আমি না। আমি দেশের খেয়ে দেশের মহিষ তাড়াই।
ব্যাস,কথা আপাতত বন্ধ,তবে হাত চালাচালি শুরু হইয়া গিয়াছে। সামান্য মুখের কথায় একজনের নাক ফাঁটিল,অন্যজনের দাঁত ভাঙিল। কার কোনটা ভাঙিল সেটা বলা নিস্প্রয়োজন। তবে ভাঙিল যে তা ঠিক।
অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমান স্বর্গ বাসে হাসিতেছেন।
-কি বুঝলে জিয়া? মানুষ আমাদের সত্যিই ভালবাসে তাই না?
-না মুজিব ভাই,এরা মূলত আমাদের মতই। ওইযে বলল না,আমি দেশের খেয়ে দেশের মহিষ তাড়াই।
-তাতে কি,দেখনা চার বছর পর্যন্ত একাধারে আমার জন্মদিন,মৃত্যুদিবস,কাঙালী ভোজ এইসব পালিত হয়।
শেখ মুজিবের সহাস্য উত্তর।
-তা অবশ্য ঠিক,তবে বাকী চার বছরতো আমার ভাষণ দিবস,জন্মদিবস প্রভৃতি নিয়েই লোকে ব্যস্ত থাকে। আপনারটা নিয়ে তাদের ভাবার সময় কোথায়?
জিয়াউর রহমানের এহেন বক্তব্য শ্রবণে শেখ মুজিবর রহমানের অপমাণ বোধ হয়। তিনি জবাব দিলেন।
-তোমার মত যে লোক ফায়ারিং স্কোয়াডে মানুষদের মেরে ফেলে,তার মত খুনীর আবার কিসের দিবস পালন?
-আপনার মত লোক,যে কিনা ক্ষমতা ও টাকার লোভে দেশের নেতাবর্গদের থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যন্ত হত্যা করে,তার আবার কিসের দিবস পালন করবে লোকে? তাকে তো লোকজন ফুলের বদলে জুতা মারবে!

ব্যস,স্বর্গ এবং পৃথিবীর সমস্ত ক্রীয়া যেন একই সাথে শুরু হইয়া গেল। নিচে অমিত এবং নয়ন দুই নেতাকে লইয়া নাক-মুখ ফাটাফাটিতে ব্যস্ত।
অন্যদিকে দুই নেতাও নিজেদের সম্মান রক্ষা করিতে নিজেরা স্বর্গে খাইবার ফল-ফলাদি একে অপরের গায়ে ছুড়ে মারিতে লাগিলেন।
কথায় আছে, ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে।

নোটঃ এই লেখাটি একটি কাল্পনিক মনের পরিভ্রুমণ মাত্র। তবে ব্যক্তি এবং স্থান কিছুটা যুক্তির দাবী রাখে।
বিঃদ্রঃ একটি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে। নয়ন এবং অমিত দুই ব্যক্তিই সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়াছিল।

No comments:

Post a Comment