Wednesday, March 24, 2010

ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রুখে দাঁড়াও ক্রসফায়ার!

দুইদিন হয়ে গেছে তারা চান ভাইয়ের কোন খবর নেই। কোথায় আছেন কেমন আছেন তাও বলতে পারবে না অশান্ত। তাই তার মন ভাল নেই। সকাল থেকে সে শান্ত থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে,কিন্তু বৃথা চেষ্টা।
কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তারা চান ভাই এমনি এমনি হাওয়া হয়ে যেতে পারেন না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কিন্তু আছে,সেই কিন্তুটা অশান্তকে খুজতে হবে।
এমনিতে অশান্তর মেজাজ সবসময় শান্ত থাকে,কিন্তু যখন অপারেশনে বের হয় তখন তার মাথা ঘোড়া মাসুদের মত গরম হয়ে যায়, তাই তারা চান ভাই তাকে এই নাম দিয়েছেন। সেই থেকে লোকে শান্তকে আর চিনে না। চিনে অশান্তকে।
এর জন্য অবশ্য অশান্ত মনে মনে তৃপ্তি বোধ করে। এই তারা চান ভাই তাকে এনে দিয়েছেন অর্থ,যশ,ক্ষমতা এবং জীবনের চরম উত্তেজনাকর সব কাজ-কারবার!
না,আর দেরী করা যায় না। ভাবতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়াল অশান্ত। খানিকক্ষণ হাটাহাটি করে মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিল সে তারা চান ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ল্যাংড়া মজিদ ভাইকে।
-হ্যালো স্লামুলাইকুম মজিদ ভাই, তারা ভাইয়ের কোন খবর পাইছেন?
-নারে অশান্ত, তয় আমি চারিদিকে পোলাপাইন পাঠাইছি। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আশা করি খবর আইসা পড়ব। তুই চিন্তা করিস না। সারা রাইত মনে হয় ঘুমাছ নাই। এহন একটা ঘুম দে,দেখবি মাথা-শরীর দুইডাই ফেরেশ হইয়া যাইব।
-ভাই,(অশান্ত হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে উঠল) কসম খোদার, যদি তারা ভাইয়ের কিছু হইয়া যায়,তেয়লে আমি আসমান-জমিন এক কইরা ফালামু।
-ঠিক আছে,তুই শান্ত হ। আরে বেডা ভয় পাছ ক্যান? তারা চান কি আমার কিছু হয় না? ওয়তো আমার কলিজার টুকরা।
বলে একগাদা উপদেশ দিয়ে ল্যাংড়া মজিদ অশান্তকে শান্ত করল।

দুইঘন্টা পর। বেলা দুপুর সবে শুরু হয়েছে। অশান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে লোক লাগিয়ে দিয়েছে। যেখান হতেই সম্ভাবনা শুনছে সেখানেই লোক লাগিয়ে খোজ করাচ্ছে। বিকেলটা যেন এক গড়ান দিয়ে সন্ধ্যায় রূপ নিল। অতশত অশান্তর খেয়াল নেই। তার মাথায় একটাই চিন্তা,তারা চান ভাইয়ের খবর যেভাবেই হোক যোগাড় করতে হবে।
এ সময় ল্যাংড়া মজিদের ফোন এল। অশান্ত রিসিভ করল।
-হ্যালো স্লামুলাইকুম ভাই, কোন খবর পাইছেন?
-হরে ভাই, পাইছি।
আশ্চর্য শান্ত গলায় বলল ল্যাংড়া মজিদ। বলতে গিয়ে তার কন্ঠটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। সেটা অশান্ত বুঝতে পারল না।
-তারা ভাই কেমন আছে,ভাল আছেতো? হের কইলাম খবর আছে,একটুও জানান না দিয়া হেয় উধাও হইয়া গেল। এর শাস্তি হেয় পাইব ছোড ভাইয়ের হাতে,হুঁউ।
উচ্ছসিত গলায় বলল অশান্ত।
-আচ্ছা অশান্ত,তুই এক কাজ কর। রফিক,গাল কাটা জনি, ছিড়া ফারুক,ট্যারা বাবু ওগো সবাইরে নিয়া তারা চানের বাসায় আয়। জরুরী কথা আছে।
-ক্যান ভাই?
গলা নামিয়ে প্রশ্ন করল অশান্ত।
-আছে,ব্যপার আছে,আয় তোরা তারপর কইতাছি।
বলে তাড়াতাড়ি ফোন লাইন কেটে দিল ল্যাংড়া মজিদ।
অশান্ত অত সাত-পাঁচ না ভেবে সবাইকে ডেকে আনাল। তারপর একসাথে নিজের বড় প্রাডো গাড়িটা বের করে রওনা দিল তারা চান ভাইয়ের বাসায়।
গেট দিয়ে ঢুকে আজ কেমন যেন অন্যরকম একটা অনূভুতি হল অশান্তর। কি সেটা সে ধরতে পারল না। তারা চান ভাইয়ের বাড়িতে আজ অনেক উচ্চলেভেলের লোকদের দেখতে পেল অশান্ত। সবাই কেমন যেন চুপিচুপি আলোচনা করছে। সারমর্মটা কি হতে পারে ভাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল অশান্ত। হতে পারে হয়তো বড় গোপন কোন মিটিং ডেকেছেন তারা চান ভাই।
সবাইকে নিয়ে দোতলায় ড্রইং রুমে ঢুকে গেল অশান্ত। সেখানে ল্যাংড়া মজিদ,বগা বরকত,রগ কাটা হাবিবসহ আরো কয়েকজন পরিচিত পুলিশ ও নেতাকর্মীদের দেখতে পেল সে।
ল্যাংড়া মজিদ মৃদু স্বরে অশান্তকে ডাক দিল। সে জানে খবরটা শোনার পর অশান্ত হয়ত ভয়ঙ্কর দানব হয়ে উঠবে। ওর এই অবস্থায় তারা চান ভাই ছাড়া কেউ ওকে দমাতে পারবে না।
-আচ্ছা অশান্ত,মানুষের জীবনে কি অনেক দুর্ঘটনা ঘটেনা?
-ঘটে ভাই,এই কথা জিজ্ঞ্যাইতাছেন ক্যান?
-তোর জীবনে ঘটছে না?
-আরে শালা! কয় কি ভাইজানে! ঘটব না ক্যান,এইতো, গত বছরইতো গুলি খাইয়া মইরা যাইতে নিছিলাম। খালি তারা চান ভাই আছিল দেইখা বাঁইচা গেছি।
-এহন এই তারা চান কি সারা জীবন তোরে আগলাইয়া রাখব? নাকি তোর নিজেরও জীবনে কিছু হইতে হইব?
-হেডা যখনকার বিষয় তহন দেহা যাইব। এসব কথা এহন কইতাছেন ক্যান?
-মনে কর,তোর তারা ভাইরে কেউ মাইরা ফালাইছে। তুই কি করবি তারে?
প্রশ্নটা শুনে পলকে অশান্তর হাত পকেটে রাখা পয়েন্ট থ্রি-টু ক্যালিবারের কাছে চলে গেল। মুখে কেমন যেন একটা ভয়ঙ্কর পশুর মত দৃষ্টি তৈরি হয়েছে । সেদিকে তাকিয়ে ঘর ভর্তি মানুষ একই সাথে শিউরে উঠল। শুধু ল্যাংড়া মজিদ,বগা বরকত আর রগ কাটা হাবিবের চোখের পাতাও নড়ল না।
-ওই মাদারচোদের বাচ্চারে ওর মার সাউয়া দিয়া রিটার্ন পাঠাইয়া দিমু এইহানে বইয়া।
গলা খাকাড়ি দিল ল্যাংড়া মজিদ। কৌটার ফাঁক দিয়ে যখন ধোয়া বেরিয়েছে,তখন কৌটার মুখ খুলে দেওয়াই ভাল। সারা ঘরভর্তি লোকের দিকে তাকাল একবার ল্যাংড়া মজিদ। তারপর স্থির চোখে তাকাল সে অশান্তর দিকে।
-গতকাল রাইতে তারা চানরে রেব ক্রসফায়ারে মাইরা ফালাইছে।


দুইদিন পর। সন্ধ্যার পরমূহুর্ত, অশান্ত ভার্সিটির সামনে বসে রয়েছে। সামনে প্রায় নিরিবিলি রাস্তাটায় কখনো কখনো দু’চারজন লোক হেঁটে যাচ্ছে। গন্তব্য বাসার দিকে। তাদের হাটার মধ্যে কিসের যেন রাজ্যের ব্যস্ততা। ভার্সিটি এরিয়ার একটা বদনাম আছে। তা হল যখন-তখন এখানে ছাত্ররা পথচারীদের আটকে ছিনতাই করে।
অশান্ত যেখানে বসে রয়েছে তার পাশে একটা বড় বিল্ডিং। সেখানে বড় বড় ভর্তি পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিল্ডিং-এর উঠোন পেরোলেই ছোট-খাট একটা মাঠ। তারপর তিনটা চা আর একটা ফুচকার দোকান। তারপর একটা পুরোন পোস্টারের ঘায়ে ক্ষত-বিক্ষত দেয়াল। কত লেখা যে এই দেয়ালে ঝুলানো হয়েছে তার নীরব স্বাক্ষী এই দেয়াল। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সেইসব লিখা মৃদু মত করে পড়া যাচ্ছে। যদিও নতুন করে চুনা মারা হয়েছে। তবুও প্রাচীন এক অন্যরকম আভিজাত্য ঝড়ে পড়ছে সেই দেয়ালের প্রতিটি স্তরে।
তার মাঝে অশান্ত যেন এক হয়ে মিশে গেল।
বাআন্নর আন্দোলন,মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস,ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে আসা ঢাকার বাইরের অসহায় গরীব বাবার গ্রাম্য সন্তান, সবার রক্ত যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সেই দেয়াল।
তার উপর নতুন করে চুনা মেরে কি লাভ? বরং কাটা ঘায়ে লবণের ছিটা হচ্ছে যেন।
তারা চান ভাইয়ের কথা মনে হল অশান্তর আজ। এই দেয়ালের পাশে দাড় করিয়ে সরকারী ঝাপসা সাদা ল্যম্পপোস্টের আলোয় বেশ কয়েকজন ছাত্রকে খুন করেছিল তারা ভাই। ছাত্রগুলো রাজনীতির নামে প্রায়শই শিক্ষকদের রগ কেটে হত্যা করত।
তারা চান ভাই,সেই তারা চান ভাইকে আজ কোথাকার কোন রেবের দল নিয়ে ক্রসফায়ার করে হত্যা করেছে।
হঠাৎ উঠে দাঁড়াল অশান্ত। হেটে ঘর হতে রঙের ডিব্বায় রাখা কালি আর ব্রাশ নিয়ে এল।
নিরিবিলি এ রাস্তার সেই ঐতিহাসিক দেয়ালে নিজের মনের গহীণে জমানো কঠোর সত্য কথাটি লিখল অশান্ত।
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রুখে দাঁড়াও ক্রসফায়ার


এর জন্য অনেক বড় করে একটা মিটিং ডাকতে হবে। কারণ ইদানিং অনেকেই ক্রসফায়ারে পড়ে জীবন হারাচ্ছে। রেবের এই অহেতুক বাচলামী বন্ধ করতে হবে। মাস্তানদেরও একটা জীবন আছে,সেই জীবনে স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে।
সুতরাং,আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারী টিএসসির সামনে মিটিং বসবে। বাংলাদেশের মাস্তান সংঘদের কেন্দ্রীয় মিটিং।
অনুষ্ঠানের নামও ঠিক করে ফেলল অশান্ত।

OPERATION UNIVERSITY FIRE

অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ারে অনেকেই যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রন পেল। এমনকি যারা মাস্তান নয় তারাও।
আজ ১৩ফেব্রুয়ারী। বিকেল হতে টিএসসির আশপাশ পুরো দখলে নিয়েছে অশান্ত বাহিণী। সাধারণ লোকজন ও ছাত্রদের চলাফেরা বন্ধ নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য। বিশাল বড় কাঁচের সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে অনুষ্ঠানের মঞ্চ হিসেবে। প্রধান অতিথি থাকবেন এ সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং বাংলাদেশের আতঙ্ক জনাব মিঃ কালা জাহাঙ্গীর।
বাদ্যগায়কীরা যন্ত্র আর গান বাজাচ্ছে মৃদু ছন্দে। আশেপাশে পাহাড়ার নামে ভয়ঙ্কর চেহারার বিদঘুটে সব মাস্তানরা ওপেন সিক্রেট অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে। টিএসসির চত্বরে মূর্তির উপর বিশাল করে তারা চান ভাইয়ের ছবি। তার পাশে জাতীয় নেতা প্রয়াত এরশাদ শিকদারের ছবিও স্থান পেয়েছে।
সন্ধ্যার সময় ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় অনুষ্ঠান শুরু হবে। এ অশান্তর একান্ত ইচ্ছা। অন্ধকার জগতের কাজকারবার অন্ধকারে করাই ভাল। তবে আলোচনা শেষে ডিনারের সময় আলোর ব্যবস্থা থাকবে। প্রধান অতিথি কালা জাহাঙ্গীর তাঁর নিজস্ব হেলিকপ্টারে করে আসছেন কিছুক্ষণের মধ্যে। অশান্ত শান্তভাবে মঞ্চে উঠে প্রধান অতিথির পাশে তার নিজের জন্য বরাদ্দ রাখা সিটটায় বসে আছে। তার সমস্ত বন্ধু-বান্ধব,ভাই-ব্রাদার,নেতাকর্মী এবং ঘুষখোর আমলারা একে একে আসছে।
মানুষের সমাগম দেখে মুগ্ধ হল অশান্ত। সে যা চেয়েছিল তাই হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের দুইটা মূল উদ্দেশ্য আছে। সেটা সে আর তার গুটিকয়েক বন্ধু ছাড়া কেউ জানে না।
এক- সে চায় তারা চান ভাইয়ের নামে প্রতি বছর সন্ত্রাসী পুরস্কার চালু করতে। কিন্তু যেহেতু জাতির নেতা মরহুম এরশাদ শিকদার এবং বর্তমানে কালা জাহাঙ্গীরের মত নেতা আছেন। তাই তাঁদের বাদ দিয়ে কিছু করলে মাস্তান সমাজ হয়তো রাজী নাও হতে পারে। তাই সে কালা জাহাঙ্গীরকে রাজী করিয়েছে। একই সাথে তিনিও নিজের নামে একটি পুরস্কার চালু করবেন। তিনি নেতা মানুষ, তার কথা শুনে নিশ্চয়ই অমত করবে না কেউ।
দুই- তাদের অনেকলোক রেবের হাতে ক্রসফায়ারে মারা গিয়েছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। তারা সরকারী পর্যায়ে আবেদন করবে। ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। দরকার হলে মিটিং-মিছিল করে আরো কিছু রক্ত যাবে। তবুও মাস্তানদের প্রতি রেবের এই ঘাড় ত্যাড়ামীভাব দূর করতে হবে।
এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটা বক্তৃতাও দিল অশান্ত। সাথে সাথে মাস্তানের দল তুমুল কড়তালী দিয়ে সমর্থন জানাল। তাদের মুখে শোনা যেতে লাগল-

“ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় রুখে দাঁড়াও ক্রসফায়ার,
রেবের গুলির ঠোঙ্গায় ফিরিয়ে দাও অত্যাচার।”
রেবের প্রতি যদিও মাস্তানদের অনেক রাগ। তাই বলে অবশ্য রেবদের সুযোগ পেলেও মারা যাবে না। তাহলে একই সাথে সরকার,মানুষ এবং প্রশাসনকে খেপিয়ে তোলার মত হবে ব্যপারটা। সাধারণ মানুষ রেবের প্রতি পুরোপুরি আস্থাশীল।
ঘড়ির দিকে তাকাল অশান্ত। সন্ধ্যা হয়েছে সবে। মাগরীবের আজান পড়েছে মসজিদে। সে নামাজ পড়ে না। মাস্তানদের অধিকাংশই নামাজ পড়ে না। তবে মহিলা হলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে অন্তত সামান্য ধর্মীয় কায়দা মানা যেত।
তাদের এ সভায় কিছু পুলিশও আসবে। এই পুলিশরা তাদের চামচার পর্যায়ে চলে গেছে।
আসলে তাদের না,তাদের টাকার চামচা হয়েছে আরকি।
অশান্তর মেজাজ শান্ত রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ সন্ধ্যার পরপর অনুষ্ঠান শুরু করার কথা। কিন্তু প্রধান অতিথি আসেন নি। অনুষ্ঠান শুরু করে কি করে?
আচমকা অশান্তর একই সাথে ক্ষোভ ও কান্না পেল। তারা চান ভাইয়ের জন্য সে আজ কিছু করতে পারছে। তাঁর নাম মাস্তান সমাজ যুগে যুগে মনে রাখবে এই পুরস্কারের মাধ্যমে।
হঠাৎ আকাশ হতে ঘুডঘুড-ঘুডঘুড শব্দ শোনা গেল। অশান্ত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটি নীল-সাদা রঙের হেলিকপ্টার দেখতে পেল। তীব্র সার্চলাইটের আলোয় টিএসসি আর মঞ্চ যেন জ্বলজ্বল করতে লাগল।
তার মোবাইলে রিঙ এল এ সময়। কালা জাহাঙ্গীর রিঙ করেছেন।
-হ্যালো স্লামুলাইকুম ভাইজান।
-হরে ভাইজান,আমি আইয়া পড়ছি। হবায় তোর মাথার উপরেই আছি,নামতাছি।
-ধন্যবাদ ভাইজান, আপনারে অসংখ্য ধন্যবাদ।

রেবের কার্যালয়ঃ
গোপন মিটিং চলছে। পেট মোটা আর মাথা মোটা এক লোক বড় চেয়ারটায় বসে বসে নাক খুটছেন। তাঁকে ঘিরে বসে আছে অনেকগুলো রেব সদস্য এবং রেবের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
সময়টা বসন্তের শেষের দিকে কখনো গরম লাগে,আবার কখনো শীত লাগে। এখন গরম লাগছে। তাই ভিতরে এসি চলছে।
তাছাড়া মনে হচ্ছে এখনি কিছু একটা অর্ডার করবেন পেট মোটা আর মাথা মোটা লোকটা। এ সময় তাঁর কন্ঠস্বর নড়ে উঠল,
-শালারা নাম কি দিয়েছে? অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ার?
-জ্বি স্যার,(লম্বা বকের মত গলাওয়ালা এক লোক বলে উঠল) শুধু তাই নয়, ছাত্রদের ধরে ধরে মারার প্ল্যান করছে নিশ্চয়ই। সবগুলো ওই তারা চান আর এরশাদের মতই বদমাশ!
-কে বদমাশ,আর কে হারামজাদা, সেটা আপনার মত বকের গলার না বললেও চলবে। আমি এমনিতেই বুঝতে পারি।
-স্যার, (মোটা বেঁটে মতন এক লোক বলে উঠল। তার নাকের নিচের গোফ কাঁটায় সম্ভবত গড়বড় হয়েছে। এ কারণে একপাশে ছোট আর অন্যপাশে বড় মনে হচ্ছে) কালা জাহাঙ্গীরের এখানে আসার উদ্দেশ্য কি হতে পারে?
-নিশ্চয়ই আমাদের ক্রসফায়ারের বদলা নিতে চায়। আচ্ছা, সে দেখা যাবে। মিস্টার মোখলেছ,আপনি এখনি আপনার সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয়ে নিন। রুই-কাতলাগুলো যেন একটাও পালাতে না পারে। অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ার না? আমি এই অপারেশনের নাম দিলাম-

OPERATION T.S.C CROSFIRE

পরের খবর অতি সংক্ষিপ্ত। রেবের দল গোপন সূত্রে খবর পেয়েছে যে দেশের সমস্ত মাস্তানরা রেবের ক্রসফায়ারের বদলা নিতে চায়। একই সাথে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রাতের অন্ধকারে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তাই তাদের মিশনের নাম দিয়েছে- অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ার।
তাই এই সমস্ত অঘটন ঘটানোর আগেই। যে কয়টা সম্ভব রেব ক্রসফায়ার কিংবা এনকাউন্টার করে হত্যা করেছে।
খবরে প্রকাশ- বিখ্যাত মফিজ তারা চানের প্রধান সহযোগী অশান্তকে সহ তার আরো অন্যান্য সহযোগীদের রেব হাতেনাতে অস্ত্র এবং গোলা-বারুদসহ গ্রেফতার করেছে। এ সময় অশান্ত আরো অস্ত্রের সন্ধান আছে বললে রেব সদস্যরা তাকে নিয়ে পুরোন ঢাকার টিকাতুলীতে যায়। পথিমধ্যে অশান্তর ওত পেতে থাকা সহযোগীরা অশান্তকে মুক্ত করার জন্য রেবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়।
অশান্ত পালিয়ে যেতে নেয়,কিন্তু পথিমধ্যে সে গোলাগুলির মাঝখানে থেকে প্রাণ হারায়।
তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অবশিষ্টঃ কালা জাহাঙ্গীরকে রেব ধরতে পারে নি। তার হেলিকপ্টারে হানা দিয়ে রেব দেখে শুধু পাইলট আছে,আর তার অনুসারীদের কারো দেখা নেই। সম্ভবত সেই অশান্ত আর তার দলবলকে ধরিয়ে দিয়েছে। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিপক্ষদের ভাল জবাব দিতে জানে কালা জাহাঙ্গীর।

No comments:

Post a Comment