বিষয়টি ভাবার মতই বটে,বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে তো নৌকার উপর দিয়ে ধান বহণ হতেই পারে না!
পারে টাকা।
কাড়িকাড়ি টাকা!
-যে টাকা পেলে ভাইকে হত্যা করতে দ্বিধা থাকে না,
-বোনকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়া যায়,
-যে টাকা পেলে মাকে আর কোনদিন সন্তানেরা আচল ধরে টান দিয়ে বলেনা “মাগো,তোমার ছেলে এসে গেছে।”
সেই টাকা!
কত্ত নৌকা যায় এ গাঁ থেকে ওই গাঁয়ে! আমি একবুক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকি। এই বুঝি আমাদের শষ্য-ফসলাদি যায়।
কিন্তু না।
দিন,মাস এমনকি বছরও যায়। তবুও আমি সেই সম্পদ দেখি না। দেখি শুধু নৌকা ভরা টাকা।
ওদিকে ধানের যে বেলা হয়ে এল। সে বুঝি আর ফিরে এল না।
তাকিয়ে দেখি একি সর্বনাশ!
চারপাশে অথই জল। মাঝে ধান তো বড় একলা হয়ে পড়েছে। আমি নদী বক্ষের মাঝে চরে তাকিয়ে দেখি শুধু ধানের ছড়াছড়ি।
এত ধান!
দেশে বুঝি এবার ধানের প্লাবন লেগে গেল।
আমি আশায় বুক বেঁধে তাকাই। হ্যাঁ, সবই ঠিক আছে।
এবার নিশ্চয়ই আবার নৌকা ভর্তি ধান যাবে।
সোনালি-রুপালী আলোয় রোদে ঝিকঝিক করবে সেই জ্বলন্ত ধান।
যেই না আমি নৌকায় উঠলাম,অমনি অমন সোনা ঝড়া রোদ্দুর যেন কোথায় মিলিয়ে গেল। আকাশ ডেকে উঠল গুড়ুগুড়ু মেঘের শব্দে। প্রচন্ড বাতাসের তোড়ে নৌকা যেন দিক হারাতে চাইল।
আমি বললাম-ঠিক আছে নৌকা, তুমি এর উপযুক্ত ফল পাবে।
বলে আমি চরে নামলাম। ধান ছাড়া প্রকৃতি যেন হাসতেই চায় না।
যোদ্ধার চকচকে তরবারীর ন্যায় সে যেন দিপ্তি ছড়াচ্ছে।
আমি তাকে নৌকায় উঠালাম। অমনি ধানের সেই উজ্জ্বল দিপ্তি বাতাসে মিলিয়ে গেল। আর সোনা ঝড়া রঙও বুঝি রইল না।
ঠিক আছে ধান, তুমিও এর ফল পাবে।
নৌকার মাঝি,আর ধানের চাষী। সকলে যেন উদগ্রীব হয়ে আছে। কখন হাটে যাবে আর কখন টাকার থলে নিয়ে গাঁয়ের পথে রওনা দিবে।
আমি তাদের নৌকায় উঠালাম। তারপর ভাসিয়ে দিলাম নৌকা মাঝ নদীতে।
নৌকার দুলুনি বেড়ে গেল,ধানের উজ্জ্বল রঙ বর্ণহীন হয়ে গেল।
চাষী আর মাঝিও চেঁচিয়ে বলল-আমাদের ফিরিয়ে নাও। বড্ড ভুল হয়ে গেছে।
কিন্তু কোন লাভ হল না। নৌকা,ধান,মাঝি আর চাষী সকলেই মাঝ নদীতে অথই জলের অতলে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আর কি আশ্চর্য!
যেই না নৌকা আর ধান হারিয়ে গেল, অমনি তাকিয়ে দেখি চারিদিকে আজ যেন ঈদের মত খুশীর আমেজ। সারা দেশ,মানুষ আর ফুল-পাখিরা যেন প্রাণ ফিরে পেল। আকাশে তখন মেঘ ডাকছে; দেবদারু গাছে বসে অনবরত ডেকে চলছে নাম না জানা একটা পাখি।
Saturday, March 20, 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment