Saturday, March 20, 2010

পাগল জরিপ-২০১০ ইন ঢাকা সিটি!

আগে পাগল বলতে বুঝাত পুরুষ প্রজাতিকে, আর এখন তাদের বলা হয় পাগলা। আর মেয়েদের খ্যাতাবটা এখনো অপরিবর্তিত-ই আছে।
পাগলী!
সুতরাং পাগল হল এখন উভচর শব্দ,কিংবা উভয়লিঙ্গ শব্দ। যেমন-মানুষ একটি উভয়লিঙ্গ শব্দ।
মোটামুটি এই হল পাগল নামের পূর্ণ সমাচার।
এবার পাগলের সঙ্গায় আসি। যাদের মাথায় গন্ডগোল আছে,এক কথায় তারাই পাগল।
কিংবা যারা কল্পনার সাথে বাস্তবের যে পার্থক্য সেটা ধরতে পারে না,তাদের পাগল বলে।
অতীতে পাগল ছিল তারাই,যারা বনে-বাদে,ক্ষেত-ক্ষামারে, কিংবা হতে পারে বাজারে লোকের সামনে বিনা দ্বিধায় কাপড়-চোপড় খুলে দ্বিগম্বর হয়ে যেত, আর একা একা দেশের এমন সব কথা বলত যেগুলো বাস্তবায়িত হলে এক নিমিষে বাংলাদেশ আমেরিকার মত না হলেও ইন্ডিয়ার মত উন্নয়নশীল হয়ে যেত।
কালের বিবর্তনে পাগলদের প্রজাতির পরিবর্তন ঘটে। আস্তে আস্তে সেই পাগল লোকের গন্ডগোল সভ্য সমাজের মানুষের মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
সভ্য মানুষগুলো এই বিজ্ঞানের আধুনিক যুগে এসে পুরোপুরি পাগলের খাতায় নাম লিখিয়েছে। তার প্রমাণ রাস্তাঘাটে ঘুরলেই দেখা যায়।
আমার এ প্রবন্ধে আমি ঢাকা শহরের বিশেষ কিছু জায়গার পাগলদের বর্ণনা দিব।

গুলিস্তানঃ
ঢাকা শহরের পাগলদের প্রধান আস্তানার মধ্যে গুলিস্তান একটি। এখানে সর্ব কিসিমের পাগল বাস করে। এই এলাকাটি ঢাকা শহরের শুরুতে হওয়ার কারণে এখানে উঁচু-নিচু উভয় স্তরের পাগলদের দেখতে পাওয়া যায়। নিচু স্তরের পুরুষ পাগলারা সাধারণত রাস্তাঘাটে ছিনতাই,চুরি কিংবা মারামারি করে। মাঝে মাঝে তারা গ্রুপ বেঁধে ডু অর ডাই মিশনে যায়। এদের লাইফে ভয় বলে কিছু নেই। এরা উঁচু স্তরের পাগলাদের শ্রদ্ধা করে।
উঁচু স্তরের পাগলারা নিচু স্তরের পাগলাদের সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ করায়। উঁচু স্তরের পাগলারা বড় বড় ধান্দা করে। যেমন- এলাকার উন্নয়নের নামে সরকারী টাকা আত্নসাৎ।
গুলিস্তান যেহেতু পুরোন ঢাকার পাশাপাশি,তাই এখানে অনেক মহিলা পাগলীও দেখতে পাওয়া যায়। এ সমস্ত পাগলীরা রাতের অন্ধকারে পাগলাদের সাথে রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। মাঝে পুলিশ নামের পাগলারা হুমতাম করে ধমক দেয়,কিন্তু তারাও পাগলীদের নিয়ে সুখ চরিতার্থ করে।
এছাড়া কিছু উঁচু স্তরের পাগলী আছে যারা পাগলাদের সাথে টাউটগিরি করে। এই সমস্ত পাগলীরা অনেক প্রতিভাশীল। এদের বুদ্ধির সাথে পাগলারা সহজে পেরে উঠে না।

গুলশান+ধানমন্ডিঃ
এ দুটি এলাকা এবং মতিঝিল,উত্তরা,বনানী প্রভৃতি প্রায় একই সিস্টেমের আওতায় পড়েছে। এখানের বেশীরভাগ পাগলারা ভিআইপি। তারা দিনের বেলা দামী গাড়িতে চড়ে মোটা ভূড়ি নিয়ে চাকরী নামের অকাজ করতে বের হয়ে পুরো ঢাকা শহরকে নিজেদের দেহ দ্বারা আচ্ছাদিত করে রাখে।
এদের পাগলামো একটু বৈচিত্র ধরণের। এরা সাধারণত যাত্রা পথে গাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করে এসির বাতাস খায়। মাঝে মাঝে যখন দুই-চারটা প্রকৃতির ছেলে (অসহায় বাপ-মা হীন) কিংবা জীবন যুদ্ধে পরাজীত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাদের কাছে হাত পাততে যায়,তখন এই পাগলারা মুখ ঝামটা মারে। অনেকে আবার হেডে সেন্টিমেন্টাল প্রবলেমের কারণে অসহায় শিশুদের ধরে মারে। তবে আমি এখন পর্যন্ত কোন বয়স্ক ফকিরকে মারতে দেখিনি।
এইসব এলাকার পাগলীরা ভয়ঙ্কর রকমের তারছিড়া। এরা রাস্তাঘাটে,শপিং মলে,ফুড শপে কিংবা ডিজে পার্টিতে টাইট জামা পড়ে নিজের দেহের পাহাড় উন্মোচন করে পুরুষের ন্যায় জিন্টসের প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এদের সাথে অল্প বয়স্ক ছেলেরা কিংবা পাগলারা সহজে পেরে উঠে না। এরা অতি আধুনিকা পাগলী।
এরা চায় পুরো দেহ উন্মুক্ত করে দেখাতে,পাছে লোকে ভাবে এরা পুরোপুরি দ্বিগম্বর পাগলী হয়ে গেছে!
এই ভয়ে সেটা পারে না। তাই পাগলাদের চোখের সামনে নিজের দেহকে ঘরের শোকেসের মত সাজিয়ে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় চলাফেরা করে। ডিজে পার্টিতে কোন পাগলা যদি এদেরকে কিছু বলে তাহলেই সর্বনাশ!
সেই হাফ পাগলাকে টোটালী ফুল পাগলা করে ছেড়ে দেবে এইসব ভয়ঙ্কর পাগলীরা।
তবে এদের মন খুব নরম। এরা যাকে ভালবাসে তার জন্য নিজের দেহের সম্পদ পুরোটাই দিয়ে দেয়। ভবিষ্যতের স্বামীর কথা চিন্তা করে না।
এদের চলাফেরার স্টাইল অদ্ভুত। এরা কখনো পুরুষের বেশে সেজে থাকে,কখনো বা গ্রাম বাংলার বধূর মত শাড়ি পড়ে। তবে তা নিতান্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া পড়ে না বললেই চলে।
এই সমস্ত পাগলীরা নিজেদের দেহকে ছিড়ে ফুড়ে রাখতেও খুব ভালবাসে। যেমন- তারা প্রায়ই নাক ফুরানোর বদলে ভ্রু ফুরায়। কিংবা নিম্নাঙ্গে (যৌনাঙ্গ) আংটি পড়ে। এতে মনে হয় পাগলীদের মেডিটেশন বাড়ে!
এ ব্যপারে তারাই ভাল বলতে পারবে,যদি মাথায় গন্ডগোলের কারণে আমাকে কামড় দিতে না আসে তাহলেই হয়!

মিরপুরঃ
মিরপুর ঢাকা শহরের পাগলদের বিশেষ করে পাগলাদের অভয়াশ্রম। এর সবচেয়ে বড় অংশের পাগল থাকে মাজার এলাকা থেকে শুরু করে মিরপুর দশ পর্যন্ত। এর মধ্যে অন্তর্গত হয়েছে- পানির ট্যাঙ্কি,টোলারবাগ,পাইকপাড়া,পীরের বাগ, পুকুরপার ইত্যাদি প্রায় সবগুলো এরিয়া।
এখানকার পাগলদের অল্পতে মাথা গরম হয়ে যায়। তারা পথ শিশুদের ধরে ধরে কারণে-অকারণে মারে। এটা সম্ভবত তাদের একটা নেশা। এছাড়া মিরপুর এক নাম্বারের গ্রামীন ফোনের কাস্টমার কেয়ারের সামনে সন্ধ্যাকালীন সময়ে কিছু নিশিকন্যা দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সাথে পুলিশ নামের পাগলা ট্রাফিকের অনেক ঘর্ষণ-সংঘর্ষ ঘটে। (মনের সংঘর্ষ)
মাঝে মাঝে এই সব নিশিকন্যাদের ধরে ধরে মাথা বেশী গরম পাগলারা আঘাত করে। নিশিকন্যাদের আঘাত করলে কেউ কিছু বলেনা তো তাই।
মাজার অংশের পরিবেশ আবার ভিন্ন। সেখানে হুজুর নামের কবিরাজ মার্কা পাগলারা জোকের তেল,খুজলির মলম এবং লিঙ্গের মালিশ নিয়ে বসে থাকে।
বেকুব সাধারন পাবলিকরা এই সব লেকচার শুনে আর ভাবে তাদের দাম্পত্য জীবন রাস্তার মাঝেই সুখি হয়ে যাবে। এই সব পাবলিকদের মাঝে কিছু আছে মাজারের পাগলা। এরা মাজারের বিশাল বটগাছকে প্রভু মনে করে সেজদা করে,তাতে ধুপ জ্বালায়।
ইসলাম ধর্মের অপমান আরকি।
মাজারের পীর কোম্পানীগুলো তো আরেক ফটকা। তারা ধ্যান করে গাঁজা খেয়ে। একে তারা বলে সিদ্ধি। প্রচলিত আছে- সিদ্ধি খাইলে বুদ্ধি বাড়ে।
এই এলাকার পাগলীদের প্রধান দুষ্ট স্বভাব হল গাধা কিসিমের পাগলা ছেলেদের ধরে ডেটিং-এ যাওয়ার নাম করে পকেট থেকে পৈত্রিক সম্পদ যতদূর সম্ভব কাচিয়ে বের করা। এ ক্ষেত্রে যার যতদূর ইমপ্রেস করার ক্ষমতা সে তত বেশী কামিয়ে নিচ্ছে।
তবে এখানকার কিছু পাগলা আছে যারা অনেক ক্ষমতাশালী। এরা নিজেদের ক্ষমতার বলে সাধারণ লোকদের উপর অনেক রকমের অত্যাচার করে,যা বাইরের লোক সহজে জানতে পারে না।
এখানকার মানুষেরা এমনিতেই নিষ্ঠুর। তাছাড়া আওয়ামীলীগ এসেছে ক্ষমতায়। কেউ তাদের কিছু বলতে পারবে না।
তাই এই দলের পাগলারা এখন অন্যধরণের একটা ভাবে আছে। কথা বললেই ঢুশ!

No comments:

Post a Comment