Saturday, March 20, 2010

ওরা আওয়ামীলীগ করে না,তাই কিছু বললেই মারে!

এতদিন ছোট ছিলাম,তাই রাজনীতির ক্ষমতা কি জিনিস তা বুঝতাম না। সেদিনের ঘটনার পর সব বুঝে গেছি।
সেদিন আমার এক বন্ধুসহ গিয়েছিলাম পাইকপাড়ার রুনু আক্তার কমিশনারের বাড়িতে। একটা চারিত্রিক সনদ দরকার ছিল আমার বন্ধুর।
আমরা যেয়ে দেখি বেশ কিছু মানুষ বসে আছে সেখানে। তারা সবাই কমিশনারের একটি সাইন নেওয়ার জন্য বসে আছে।
কিন্তু কমিশনারের কি আর ক্ষমতা,তার চেয়ে বেশী ক্ষমতা বোধহয় যাকে দায়িত্ব দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে সেই তৃতীয় শ্রেণীর লোকটার। যার কাজ শুধু লোকের কাগজ-পত্র কিংবা জরুরী সনদ কমিশনারের কাছে পৌছে দেওয়া।
সে গরীব এবং অশিক্ষিত লোকদের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন তারা মানুষ নয়। তাদের সনদ দিতে অযথাই দেরী করিয়ে রাখল। আমি নিজেও অস্থিরভাবে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু লোকটা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার পরিচিত যারা আছে তাদের সময় দিতে লাগল। একজন মহিলা এল এ সময়,তাকে দেখেই সেই কমিশনারের নিয়োগ করা লোকটা লাফিয়ে উঠে সালাম জানাল।
কি খাবেন সেই মহিলা কিংবা মহিলার কি লাগবে তার জন্য লোকটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। কিন্তু মহিলাকে দেখে মনে হল সে ওই লোকটাকে মোটেও পাত্তা দেয় না।
সবাই যেখানে অনুরোধ করে নিজের কাজ আদায় করে নিচ্ছে সেখানে সেই মহিলা অনুরোধ নয় আদেশ করল। লোকটা অনুগত কুকুরের মত মহিলার সেই কাজ করে দিল।
পরে শুনলাম মহিলা নাকি কমিশনারের খুব কাছের মানুষ।
মহিলা চলে যাওয়ার পর লোকটা আমার দিকে তাকাল। কি লাগবে জিজ্ঞ্যেস করতে বললাম যে চারিত্রিক সনদ। সে ঠিকানা জানতে চাইলে তাকে বললাম,
-৩৭/২,সি/১,সালেমউদ্দিন মার্কেট,মিরপুর-১,ঢাকা-১২১৬।
শুনে লোকটা ধমকে উঠল।
-ধুরো! সালেমউদ্দিন মার্কেট কি কোন জায়গার নাম হল?
-জ্বি আঙ্কেল,ওই দশতলা গার্মেন্টসের সামনের বাড়িটাই।
জবাব দিলাম আমি।
-যাও ভাগো এহানতে। (বিরক্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠল) আমি কই জায়গার নাম কি,আর তুমি কও গার্মেন্টসের সামনে। আমি কি তোমারে গার্মেন্টসের কথা জিজ্ঞাইছি? জায়গার নাম কইতে পার না আবার আইছ চারিত্রিক সনদ নিতে।
অপমানের সুরে বলে উঠল লোকটা। আমি বললাম,
-দেখুন আঙ্কেল,আমরা ছোট মানুষ,আপনারা মুরুব্বী,আপনারা যদি আমাদের শিখিয়ে না দেন,তাহলে আমরা কি করে জানব?
-চোপ, এত কথা বল ক্যান? এহন কইলাম চারিত্রিক সনদ আটকাইয়া রাখমু। এই পুরাডাইতো সালেমউদ্দিন মার্কেট। এহন কি আমি কমিশনার আপার বাড়ি সালেমউদ্দিন মার্কেটে পড়ছে কমু।
আমি বলতে নিলাম ওই ভাগের পুরোটাই তো শাহ আলীবাগে পড়েছে,তাহলে তো অন্য কোন জায়গাকেও শাহ আলীবাগ বলা যায়। কিন্তু আমি আর জবাব দিলাম না। ওদের কাছে আমি,আমরা সবাই জিম্মি। মজার ব্যপার হল ক্ষমতায় নেই ওরা,কারণ ওরা বিএনপি।
অথচ ক্ষমতায় না থেকেও যে ধরণের গায়ে পড়ে চামারের আচরণ করে এরা তা দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই!
এখন আওয়ামীলীগ সরকার নয়,তবুও ওদের কি দাপট!
এক লোক এল লুঙ্গি পড়া। যাকে দেখেই বোঝা যায় সে খুব গরীব ঘরের লোক।
কমিশনারের সেই লোকটা শুধু শুধু সেই গরীব লোকটাকে বিভিন্ন বকা মিশ্রিত উপদেশ ঝাড়তে লাগল।
অথচ কি আশ্চর্য! এই সব লোকের ভোট এবং পরিশ্রমের ফসল খেয়ে আজ তারা টাকার পাহাড় বানিয়েছে। সে কথা মনে হয় কস্মিনকালেও স্বীকার করতে চাইবে না তারা।

আরেকটা কথা মনে পড়ছে আমার। এ কথা হল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির পাগলামী নিয়ে।
একদিকে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসেই আমাদের এলাকার যত বিএনপির স্বল্প ক্ষমতার লোকজন ছিল তাদের ইচ্ছে মত মেরে চার বছরের জ্বালাতনের ঝাল তুলেছে। রাম দা,বটি এমন কি রিভলবার নিয়ে পর্যন্ত আওয়ামীলীগের কর্মীরা বিএনপির কর্মীদের মারতে তেড়ে গেছে।
নেতাদের প্রশ্ন করা হলে তারা জবাব দেন যে এটা আওয়ামীলীগের ক্ষতি সাধন করতে চাওয়া কিছু অসাধু দুমুখো মানুষের কার্যক্রম। কখনোই তাঁরা নিজের ঘাড়ে দোষটা স্বীকার করে নেন না।
এরপর এল দেশের বড় বড় যত স্থাপত্য আছে সেগুলো নিয়ে লাফালাফি।
প্রধানমন্ত্রী নিজে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করলেন,লোকে যাতে কিছু বলতে না পারে সে জন্য শেখ মুজিবের নামে না দিয়ে দিলেন সুফি সাধকদের নামে।
এছাড়া আমাদের মিরপুর সনি হলের সামনে একটা জিয়ার প্রতিকৃতি সম্বলিত চত্বর ছিল। সেটার নাম পরিবর্তন করে এখন স্বাধীনতার চত্বর করা হয়েছে। সন্দেহ নেই লোকে ভাববে,ভালই তো। এখন সুন্দর হয়েছে।
মূলত এসব করা হয়েছে যাতে কোন কিছুতে বিএনপির নাম না থাকে।
কিন্তু একটা কথা হল যে নামে কোন কিছু আসে যায় না। বরং সেই নামের স্বার্থকতার চেয়ে তার যে সেবার কার্যক্রম তা থেকে মানুষ কতটুকু উপকৃত হচ্ছে কিংবা কি রকম সেবা পাচ্ছে,তা হল মূল কথা।


এই গেল আওয়ামীলীগের কথা। এবার বিএনপির কথায় আসি। ৭ই মার্চ তারেক রহমান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাই এখন থেকে ৭ই মার্চ তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিএনপির জন্য।
এ ব্যপারে আমি বলতে চাই খুব সামান্য কথা। ধরুণ, এখন আমার অনেক টাকা এবং ক্ষমতা আছে। ঘুষের টাকা খেয়ে আমার ডায়রিয়া,আর তার সাথে অনেক পাতলা পায়খানা হল। তো সেই পাতলা পায়খানা ৭ই মার্চ হঠাৎ করে আল্লাহর মর্জিতে ভাল হয়ে গেল।
তাহলে তো আমি প্রতিবছর ৭ই মার্চ এ আরাফাত হোসেনের ডায়রিয়া এবং পাতলা পায়খানা মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করতে পারি?
কি বলেন!
আর শিবিরের কথা নাই বললাম। তারা যা বলে সব ইসলামের আলোকে বলে থাকে, এ কথাটি আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু তাদের কাছে কোন দোষ ধরা পড়লে যাকে তাকে ধরে গলার-পায়ের রগ কেটে ফেলা এসব নিশ্চয়ই ইসলামে আদেশ করেনি।
সুতরাং যারা ইসলামের গুণগান করে আবার সেই ইসলামকেই পায়ের নিচে পিষে ধরে,তাদের কথা জনগণের শুনার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
আমাদের দেশের হচ্ছে এই অবস্থা। কোথায় কোন সমস্যা রাজনৈতিক দলগুলো একত্রে সমাধান করবে, তা না করে বরং সেই সমস্যা থেকে আরো হাজারটা সমস্যা সৃষ্টি করবে। তাও দলীয় কোন্দল নিয়ে। একদিন যে মরে গিয়ে এই পৃথিবীর মাটির নিচে চলে যেতে হবে তা এরা বুঝে বুঝতে চায় না। এ কারণে দেশের ততটা ডেভেলপ হচ্ছে না।

No comments:

Post a Comment