Saturday, March 20, 2010

জাতি আজ কলঙ্ক যুক্ত!

আমাদের দেশের অধিকাংশ লেখক,সাংবাদিক,পুলিশ এবং নেতাদের একটা বদ অভ্যাস আছে। তাঁরা নিজের খেয়ে পরের মহিষ তাঁড়াতে কিংবা ছুরি হাতে দন্ডায়মান জল্লাদের চামচা হতে ভীষন পছন্দ করেন।
এর কারণ স্বার্থ কিংবা প্রাণ বাঁচাতে যে কারণেই হোক না কেন,তাঁদের উদ্দেশ্য যে অত্যন্ত মহৎ তা নিয়ে কোন সংশয় নেই।
কিন্তু আমাদের দেশে একটা একটা প্রবাদ আছে- চোরের দশ দিন,তো গৃহস্থের একদিন।
এ কথাটা হয়তো তাঁরা ভুলে গেছেন। কাজেই তাঁরা ধরে নেন যে এই অবস্থাই ছিল,এই অবস্থাই আছে এবং এই অবস্থাই থাকবে।
তাঁদের এহেন নির্বুদ্ধিযুক্ত এসব কাজ-কারবার দেখে আমার হাসিও আসে,আবার রাগও হয় প্রচন্ড।
দেশের মানুষ নিশ্চয়ই রাজনীতির চামচা নয়,বরং রাজনীতি দেশের মানুষের উপর নির্ভরশীল। এ কথার পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী প্রমাণ আমাদের চোখে-মুখের সামনেই ভাসছে। তাই এ নিয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে উল্টা-পাল্টা লিখে আপনাদের কারো সময় নষ্ট করতে চাই না।
আসল কথা হল গিয়ে যে সমস্ত মানুষ রাজনীতি করছে তাদের আচার-ব্যবহার নিয়ে। একটা সময় আমার মনে হত দেশ থেকে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি যদি সমূলে ধ্বংস করা হয়, তবেই বুঝি বাংলাদেশ হতে সকল প্রকার রাজনৈতিক অস্থিরতা,অশান্তি এবং দুর্নীতির সুখময় সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি,দল ধ্বংস করা মানে দেশকে ধ্বংসের হাতে ঠেলে দেয়া। কারণ নতুন যে দল আসবে তারা কখনো দেশ চালায় নি বলে বিষয়টি তাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন বলে মনে হবে। তাই কোন দল ধ্বংস নয়,বরং দলের নেতা-কর্মীদের সৎ মানষিকতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব।
যাই হোক,অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেললাম।
তো আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু শ্রেণীর মানুষের আচার-ব্যবহারও পাল্টে যায়। অনেকখানি ঋতু পরিবর্তনের মতই ব্যাপার-স্যাপার!
তাদের সংখ্যা যেমন অসংখ্য,তেমনই তাদের সমর্থনকারীদের সংখ্যাও অগণিত। কারণ আমি যদি কারো প্রশংসা করি,তাহলে তো সে আমাকে সাপোর্ট করবেই।
এই সমস্ত মানুষ,যারা দলের কর্মী না হয়েও দলের পক্ষে চামচামী করে তাদের মুখের মাপকাঠি সহসা বোঝা যায় না। যখন যেই দল ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের প্রশংসা করতে করতে তাদের নাভিতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। নেত্রী তখন হয়তো সাদর সম্ভাসন ও প্রশংসা বিগলিত কন্ঠে তার শ্লোকবাণী জ্ঞাপন করেন নিজ লোক সমক্ষে।
এই চামচারা টেলিভিষণে দেয় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর কিংবা নেতা-এমপির উদ্দেশ্যে সম্মানসূচক ছড়া এবং প্রশংসা।
রেডিওতে দেয় তাদের বিশ্বনিন্দিত কিন্তু বাঙ্গালী কতৃক প্রশংসিত শুভেচ্ছা বাণী!
আর পত্র-পত্রিকায় লিখে লেখকের চেয়ে সম্পাদকের কালি আগে ফুরিয়ে যায় ক্ষমতায় থাকা দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর তেল দিতে দিতে।
এহেন চামচে ভরা দেশের লেখক,সাংবাদিক,পুলিশ এবং নেতাদের মত লোকজনেরা। তারা বিএনপির আমলে ধানের গোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল,আর এখন ব্যস্ত আওয়ামী লীগের ত্রানের নৌকা নিয়ে। তাদের ব্যস্ততা কোন দলের বেলায়ই শেষ হয় না।
এই যেমন সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হল। তারপর দেখতে পেলাম সেই সব চামচাদের। তারা লোকসমাজে,মিডিয়ায় এবং সংবাদপত্রে সমানভাবে বন্দনা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অমরত্বের দুর্লভ নির্মম কাহিণী।
তখন মিছে তাদের চোখের জল দেখে ঘৃণায় রিরি করেছে আমার মন। মিছে এই সং সাজার পিছনের কারণ হল নেত্রীকে খুশী করা।
তাদের একেকজনের সাহিত্যের পাতা বাংলা একাডেমিতে স্থান পেয়েছে বছরের সেরা প্রবন্ধ হিসেবে। অথচ আমার জানামতে বঙ্গবন্ধু ধোয়া তুলসী পাতা জাতীয় কিছু নন। যাক,মৃত মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করতে নেই। তবে শেখ হাসিনা যে দুটি কথা বলেছেন তা আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে।
এক,”কোন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়,একজন সাধারণ কন্যা হিসেবে পিতার সোহাগ হতে বঞ্চিতকারী খুনীদের শাস্তির প্রত্যাশা করেছি আমি।”
দুই,”আওয়ামী লীগে কোন দল পরিবর্তনকারীদের স্থান হবে না।”
দুই নম্বর পয়েন্টটি আমার পূর্বের সমস্ত কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট কিনা তা ভেবে দেখতে সকলের প্রতি অনুরোধ রইল।
আমরা জানি,বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীদের বিচার হয়েছে। এখন এটা ঠিক যে যারা হত্যা করেছেন তারা সকলেই চরম শাস্তির যোগ্য। কিন্তু পৃথিবীতে কেউ যত পাপই করুক,কোন মানুষের কি পাপের দরুণ মৃত্যুকে বরণ করার পরেও জুতার মার খাওয়ার প্রয়োজন আছে?
ঠিক সে কাজটি হয়েছে আসামীদের মৃত্যুদন্ডের পর। এরপর আবার সেই সব সাংবাদিক,লেখক,পুলিশ আর নেতাদের নানা শ্রেণীবিভাগ (যারা চামচাদের অন্তর্গত) দাবি করছে যে জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত।
কিন্তু আমি দিব্য দৃষ্টিতে বলুন আর আসল দৃষ্টিতেই বলুন দেখতে পাচ্ছি যে জাতি আজ থেকে কলঙ্ক যুক্ত হ্ল।
কারণ রাজনৈতিক অপরাধ শুধু বাংলাদেশে নয়,পৃথিবীর আরো অনেক দেশেই দেদার হচ্ছে। তাই বলে শাস্তি প্রদানপূর্বক মৃত্যুর পর তাদের কবরে পৌছার আগে পুনরায় জুতা মেরে গরু দান করার মত দৃষ্টান্ত মনে হয় একেবারেই বিরল!!
এত সব ঘটনা নিয়েই আমরা অনেক ব্যস্ত আছি,তাই চামচারা যা বলে তাতেই আমাদের হৃদয়ক্ষরণ শুরু হয়,জানিনা কবে এই অবস্থা বন্ধ হয়ে আমাদের নেত্রীদের চোখের তারা খুলবে।

No comments:

Post a Comment