Sunday, March 21, 2010

জিয়া উদ্যেনে লীলা করতে যেয়ে ফ্রি মাইর!

আমার বন্ধু,নাম না বললেও চলবে। গিয়েছিল জিয়া উদ্যেনে একটা গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে।
ধরি ওর নাম রৌদ্র। তো ঘটনা শুনেতো আমি অবাক। ওর মত ছেলে কিনা জিয়া উদ্যোনে ঘুরতে যায়,তাও আবার মেয়ে নিয়ে!!
খোজ নিলাম ভালভাবে,জানতে পারলাম তার পুরো ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে সে ফেসবুকে চ্যাট করছে। হঠাৎ বাংলাদেশী একটি মেয়ে,ধরি তার নাম নাসরিন, তো এই নামের মেয়েটির সাথে পরিচয় হয়।
অনেকদিন ধরে চ্যাটা-চ্যাটি। একপর্যায়ে মেয়েটির নাম্বার পায় আমার সেই রৌদ্র নামের বন্ধু।
তারপর খেয়ে না খেয়ে দুইজনের মধুর আলাপ। উল্লেখ্য, আমার বন্ধুটির জীবনে কোন মেয়ে আসেনি। তাই সে নাসরিনের সাথে খুব বেশী জড়িয়ে গেল। ইমোশন আর কাকে বলে!
আমার কাছে চুপিচুপি জানাল যে মেয়েটির পিছনে সে অলরেডী ২,৫০০ টাকা খরচ করে ফেলেছে। আমি শুনলাম,কিছু বলিনি। শুধু উপদেশ দিয়েছি যেন দেখে শুনে পথ চলে।
এরপর অনেকদিন রৌদ্রের সাথে আমার দেখা নেই। হঠাৎ দেখা হল সেদিন মিরপুর এক নাম্বারের ওভারব্রীজের উপর। তাকে দেখে চেনাই যায় না এমন অবস্থা।
কি সমাচার জিজ্ঞ্যেস করায় আমাকে সব খুলে বলল। আমার এলাকার ছেলে-পিলেগুলো আবার আমাকে মানে খুব।
রৌদ্রের সমস্যা হল একটা কথা বলতে যেয়ে আগে-পরে করে ফেলে। তাই তার ভাষায় না দিয়ে আমি নিজের উক্তিতে তুলে ধরছি ঘটনাটা।
বৃহস্পতি বার রৌদ্রের কলেজ নেই। দুপুরবেলা সেই নাসরিন ওকে কল করে জানাল যে বিকেলে সে দেখা করতে চায়। রৌদ্র তো এমনি একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল এতদিন।
কোন রকম মুখে চারটা দুপুরের ভাত গুজে দিয়ে স্মার্ট হয়ে সেজেগুজে রওনা দিল জিয়া উদ্যোনে।
ছুটির দিন নয়,তাই মানুষও কিছুটা কম। রৌদ্রের কাছে অন্তত এটাই ভাল মনে হল। নাসরিন বলেছে সে চকলেট কালারের একটা শাড়ি পরে আসবে। রৌদ্র কাল রঙ্গা জিন্টসের সাথে বেগুনী একটা শার্ট পরেছে। পায়ে আধুনিক স্ন্যাকের জুতা।
পকেটে দামী এলজি আইফোন টাচ,আর অবশ্যই বেশী করে মেয়েটিকে চাইনিজ কিংবা ভাজা মুরগী(চিকেন ফ্রাই) খাওয়ানোর মত মোটা চামড়ার মানিব্যাগ।
যথারীতি মেয়েটি এল, আগেই মোবাইলে আলাপ হয়েছিল।
রৌদ্র দেখেই চিনতে পারল এই তার ফেসবুক নন্দিনী। দেখতে বেশ সুন্দরী বলা চলে। পরনে শাড়ির উপর কাল ব্লাউজ স্পষ্ট যৌবনের ইঙ্গিত করছে। সারা মুখে কেমন যেন গোপন করা একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে পড়েছে। তার মাঝে ঝকঝকে সাদা দাতের হাসি সাদা টুথপেষ্ট পেপসুডেন্ট কোম্পানীর বিজ্ঞাপন চিত্রের মত মনে হল রৌদ্রের কাছে।
উভয়ে একে অপরকে “হাই,দেখা পেয়ে খুব খুশী হলাম, স্বপ্নেও ভাবিনি এতটা মজার হবে” ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন তরুণ প্রজন্মের ডায়ালগ দিল। তারপর এক প্রস্থ বাদাম খেতে খেতে নিজেদের কথা এবং পরিবারের কথা চলল। কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যা হয়েছে তা রৌদ্রের কিংবা বোধ করি নাসরিন নামের মেয়েটিরও মনে নেই।
মানুষজন ততক্ষণে কমে এসেছে। উদ্যোনে গাছ-পালা আর রাতের পূর্বাগমনের আভাস ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
এ সময় কোথা হতে চারজন হিজড়া এসে দাঁড়াল। শুরু হল ফাইজলামী আর বদমাইশি। রৌদ্র আর নাসরিন এদের হাত থেকে নিজেদের ছাড়াতে যেয়ে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,তখন বিদায় নিল হিজড়াগুলো।
যাক বাবা,বাঁচলাম! বলে যেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে গেল দুইজন,ঠিক তখনি সামনে এসে দাঁড়াল একদল বাইদানী (মহিলা সাপুড়ে)। দুইজনকে বলল যে তাদের অবশ্যই সাপের খেলা দেখতে হবে,তা না হলে কাউকেই ছাড়া হবে না।
রৌদ্রের মাথা হঠাৎ গরম হয়ে গেল। রেগেমেগে বলল,
-তোমগো সাপ তোমগো সাউয়ার মধ্যেই রাখ। আর একবার ডিস্টার্ব করবা তো দেইখো কি করি।
কিন্তু বাইদানীরা রৌদ্রের কথা শুনে তেমন পাত্তা দিল বলে মনে হল না। বেটে মতন বাইদানীটা তখনই ঝোলা খুলে সাপ বের করল। বের করে সেটা হাতে নিয়ে রৌদ্রের দিকে এগিয়ে এল।
রৌদ্র আর নাসরিন দুজনেই ভয় পেয়ে হঠাৎ উল্টো দিকে ছুটতে শুরু করল। বাইদানীদের সেকি হাসি। মনে হয় রাতের জিয়া উদ্যোন শুধুমাত্র সংখালঘুদের জন্যই।
খানিকদূর দৌড়িয়ে দুইজন যেই না প্রধান দরজার সামনে এসে থেমেছে,তখন কোথা হতে যেন একগাড়ি পুলিশ এসে নামল সেখানে।
হাতে-নাতেই ধরা পড়ল ধাবমান দুই যুবক-যুবতী।
শুরু হল পরবর্তী কৈফিয়ত। কেন এই রাতের বেলা মেয়ে নিয়ে জিয়া উদ্যোনে এসেছ?
কেন আবার এখন দৌড় দিচ্ছ? তাও আবার মেয়েটিকে ফেলে রেখে?
কি কর,কোথায় থাক? এই সমস্ত প্রশ্ন করে দুইজনকেই ঘাবড়ে দিল পুলিশের দল।
ফলে সঠিক উত্তরের চেয়ে তোতলামী বেশী হয়ে গেল রৌদ্রের।
আর যায় কোথায়! পুলিশের হাতের ডান্ডা! তাও আবার লাইসেন্স করা!
ঠেকাবে কে? শুরু হল দমাদম হাতে পায়ে ওপেন সিক্রেট মার!
সঙ্গের টাকা-পয়সা,মোবাইল,মানিব্যাগ এমনকি পায়ের জুতা পর্যন্ত খুলে ঘুষ দিয়ে আসতে হল রৌদ্রকে।
তবুও শান্তনা। ইজ্জততো বাঁচল!
বাসায় পৌছার পর সিমটা তার মায়ের মোবাইলে লাগাতেই নাসরিনের নাম্বার থেকে কল এল হঠাৎ। খানিক্ষণ জিদের চোটে রিসিভ করল না রৌদ্র।
এই মেয়েটি একটা কুফা! একে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে এতসব ঝামেলা এবং সম্পদ গচ্চা গেছে।
তবুও শেষ পর্যন্ত রিসিভ করল রৌদ্র। হ্যালো বলতেই যা বলল নাসরিন শুনে রৌদ্রের মাথা ঘুরে গেল।
নাসরিন বলল যে এ পর্যন্ত যেসব হিজড়া,বাইদানি এবং পুলিশ এসেছে সবই তার নিজস্ব লোক।
এসব লোকদের দিয়েই সে এ ধরণের ধান্দা করে। ফেসবুকের মত আরো কয়েকটি সাইটে তার বিভিন্ন নামের প্রোফাইল আছে।
সেখানে রৌদ্রের মত গর্দভ ছেলেদের ধরে বোকা বানানো হয়।
তারপর নাসরিন মাফও চাইল রৌদ্রের কাছে। এটা নাকি সবার থেকেই চাওয়া হয়। যাতে কেউ মনে কষ্ট না রাখে।
আর রৌদ্র,সে কষ্ট রাখবে কি?
কি ঘটেছে ঠিক মত তাই মনে করতে পারল না।

No comments:

Post a Comment