Wednesday, March 24, 2010

আসুন,আমরা বিনা পয়াসায় মানুষকে সাহায্য করি!

আমাদের চরিত্র দিনদিন পাহাড়ের গুহার তলায় নেমে যাচ্ছে। এখন আমরা অসহায় লোকদের দুটি টাকাও সাহায্য করতে চাই না। ফকির দেখলে ভাবি, দেশে এত ফকির! সবাইকে কি আমরাই চালাব নাকি?
আমাদের নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজেও অসহায়কে সাহায্য করতে পছন্দ করতেন। তবে তিনি মনে করতেন যার দুটি হাত আছে এবং ক্ষমতা আছে রুজি করার,তাকে ভিক্ষা না দিয়ে বরং তার রোজগারের পথ সুগম করাই ভাল।
কিন্তু আজকাল আমরা তাও করতে চাই না। আমাদের সমাজে অনেক বুদ্ধিমান অসহায় যুবক আছে। যারা সম্মানের ভয়ে কারো কাছে হাত পাততে চায় না। আবার ঘরে এদের তিন বেলার মধ্যে দুবেলা খাদ্য জোটে তো একবেলা জোটে না।
এই সমস্ত জ্ঞানী ছেলেরা অনেক সময় আইটি সেক্টরেও ঢুকে পড়ে। আমরা যারা সারাদিন নেটে বসে সময় কাটাই,তাদের জন্য ওই সমস্ত ছেলেদের সাহায্য করা সম্ভব এবং একদম বিনা পয়সায়!
ভাবছেন কিভাবে?
আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ওয়েব সাইট ব্রাউজ করি। সেখানে কন্টেন্ট গুলো মনমত না হওয়ায় আমরা বিরক্তি প্রকাশ করে ফিরে আসি। কিন্তু বড় বড় বিখ্যাত সাইটগুলোতে আকর্ষণীয় লোভনীয় কন্টেন্ট দেখে আমরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে ক্লীক করি। এতে বড় ওয়েব সাইটগুলোতে লাখ লাখ টাকা আসছে।
অথচ যে দরিদ্র ঘরের ছেলে কষ্ট করে নিজস্ব একটি ওয়েব সাইট তৈরি করে দু মুঠো খেয়ে বাঁচার জন্য চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে,তার বিজ্ঞাপনে আমরা ক্লীক করি না।
অথচ আমাদের একটি ক্লীক হয়তো ছেলেটির পরিবার চালাতে সাহায্য করে। এখানে ক্লীক করলে আমাদের তো আর পকেটের টাকা খরচ হচ্ছে না। তাহলে বিনে পয়সায় ওই ছেলেটিকে সাহায্য করতে দোষ কোথায়?
আপনারা প্রায় সময়ই বিভিন্ন সাইট জ্ঞানের প্রয়োজনে ভিজিট করেন, সুতরাং একটি কন্টেন্ট বিহীন সাইটে ক্লীক করে কারো পরিবার চালানোর জন্য সাহায্য করতে পারেন আপনারাই।
কারণ আপনাদের মধ্যেই অনেকে হয়তো আবার ওয়েব সাইট খুলে বসে আছেন। সুতরাং ওই সাইটটির ভবিষ্যৎ আপনাদের ক্লীকের উপরই নির্ভর করছে।
এ মহৎ কাজ করতে হয়তো আপনাদের বিরক্তি বোধ হবে। তাই সহজে করার জন্য একটি টিপস দিচ্ছি।
আপনাকে বিজ্ঞাপনে ক্লীক করে বসে থাকতে হবে না পেজের অপেক্ষায়। আপনি সহজে প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপণে ক্লীক করতে পারেন অনেক অল্প সময়ে।
একটি বিজ্ঞাপণে ক্লীক করুন,যখন দেখবেন কম্পিউটার মনিটরের উপরে যেখানে ওয়েব পেজের এড্রেস দেওয়া থাকে সেটি বদলে বিজ্ঞাপণের লিংকের ঠিকানা এসেছে,তখনি সেই পেজ আসার আগেই আরেকটি বিজ্ঞাপনে ক্লীক করুন। এভাবে লিংক এড্রেস চেঞ্জ হওয়ার পরে কিন্তু নতুন পেজ আসার পূর্বে আরেকটি বিজ্ঞাপণে ক্লীক করতে পারেন।
তাহলেই সাইটে ধরে নিবে যে বিজ্ঞাপণে ক্লীক করা হয়েছে।
তবে একটি কথা,তা হল কিভাবে বুঝবেন যে সাইটটি কি কোন অসহায় দরিদ্র লোকের নাকি ধনী কোন লোকের খেয়াল?
এটি আসলে যারা দীর্ঘদিন নেটে ব্রাউজ করছেন তারা এক নজর দেখেই বুঝতে পারবেন। ওই যে বলে না- এক্সপেরিয়েন্স!
সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকেই।

ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রুখে দাঁড়াও ক্রসফায়ার!

দুইদিন হয়ে গেছে তারা চান ভাইয়ের কোন খবর নেই। কোথায় আছেন কেমন আছেন তাও বলতে পারবে না অশান্ত। তাই তার মন ভাল নেই। সকাল থেকে সে শান্ত থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে,কিন্তু বৃথা চেষ্টা।
কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। তারা চান ভাই এমনি এমনি হাওয়া হয়ে যেতে পারেন না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে কিন্তু আছে,সেই কিন্তুটা অশান্তকে খুজতে হবে।
এমনিতে অশান্তর মেজাজ সবসময় শান্ত থাকে,কিন্তু যখন অপারেশনে বের হয় তখন তার মাথা ঘোড়া মাসুদের মত গরম হয়ে যায়, তাই তারা চান ভাই তাকে এই নাম দিয়েছেন। সেই থেকে লোকে শান্তকে আর চিনে না। চিনে অশান্তকে।
এর জন্য অবশ্য অশান্ত মনে মনে তৃপ্তি বোধ করে। এই তারা চান ভাই তাকে এনে দিয়েছেন অর্থ,যশ,ক্ষমতা এবং জীবনের চরম উত্তেজনাকর সব কাজ-কারবার!
না,আর দেরী করা যায় না। ভাবতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়াল অশান্ত। খানিকক্ষণ হাটাহাটি করে মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিল সে তারা চান ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ল্যাংড়া মজিদ ভাইকে।
-হ্যালো স্লামুলাইকুম মজিদ ভাই, তারা ভাইয়ের কোন খবর পাইছেন?
-নারে অশান্ত, তয় আমি চারিদিকে পোলাপাইন পাঠাইছি। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আশা করি খবর আইসা পড়ব। তুই চিন্তা করিস না। সারা রাইত মনে হয় ঘুমাছ নাই। এহন একটা ঘুম দে,দেখবি মাথা-শরীর দুইডাই ফেরেশ হইয়া যাইব।
-ভাই,(অশান্ত হঠাৎ চিৎকার করে কেঁদে উঠল) কসম খোদার, যদি তারা ভাইয়ের কিছু হইয়া যায়,তেয়লে আমি আসমান-জমিন এক কইরা ফালামু।
-ঠিক আছে,তুই শান্ত হ। আরে বেডা ভয় পাছ ক্যান? তারা চান কি আমার কিছু হয় না? ওয়তো আমার কলিজার টুকরা।
বলে একগাদা উপদেশ দিয়ে ল্যাংড়া মজিদ অশান্তকে শান্ত করল।

দুইঘন্টা পর। বেলা দুপুর সবে শুরু হয়েছে। অশান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে লোক লাগিয়ে দিয়েছে। যেখান হতেই সম্ভাবনা শুনছে সেখানেই লোক লাগিয়ে খোজ করাচ্ছে। বিকেলটা যেন এক গড়ান দিয়ে সন্ধ্যায় রূপ নিল। অতশত অশান্তর খেয়াল নেই। তার মাথায় একটাই চিন্তা,তারা চান ভাইয়ের খবর যেভাবেই হোক যোগাড় করতে হবে।
এ সময় ল্যাংড়া মজিদের ফোন এল। অশান্ত রিসিভ করল।
-হ্যালো স্লামুলাইকুম ভাই, কোন খবর পাইছেন?
-হরে ভাই, পাইছি।
আশ্চর্য শান্ত গলায় বলল ল্যাংড়া মজিদ। বলতে গিয়ে তার কন্ঠটা কেমন যেন কেঁপে উঠল। সেটা অশান্ত বুঝতে পারল না।
-তারা ভাই কেমন আছে,ভাল আছেতো? হের কইলাম খবর আছে,একটুও জানান না দিয়া হেয় উধাও হইয়া গেল। এর শাস্তি হেয় পাইব ছোড ভাইয়ের হাতে,হুঁউ।
উচ্ছসিত গলায় বলল অশান্ত।
-আচ্ছা অশান্ত,তুই এক কাজ কর। রফিক,গাল কাটা জনি, ছিড়া ফারুক,ট্যারা বাবু ওগো সবাইরে নিয়া তারা চানের বাসায় আয়। জরুরী কথা আছে।
-ক্যান ভাই?
গলা নামিয়ে প্রশ্ন করল অশান্ত।
-আছে,ব্যপার আছে,আয় তোরা তারপর কইতাছি।
বলে তাড়াতাড়ি ফোন লাইন কেটে দিল ল্যাংড়া মজিদ।
অশান্ত অত সাত-পাঁচ না ভেবে সবাইকে ডেকে আনাল। তারপর একসাথে নিজের বড় প্রাডো গাড়িটা বের করে রওনা দিল তারা চান ভাইয়ের বাসায়।
গেট দিয়ে ঢুকে আজ কেমন যেন অন্যরকম একটা অনূভুতি হল অশান্তর। কি সেটা সে ধরতে পারল না। তারা চান ভাইয়ের বাড়িতে আজ অনেক উচ্চলেভেলের লোকদের দেখতে পেল অশান্ত। সবাই কেমন যেন চুপিচুপি আলোচনা করছে। সারমর্মটা কি হতে পারে ভাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল অশান্ত। হতে পারে হয়তো বড় গোপন কোন মিটিং ডেকেছেন তারা চান ভাই।
সবাইকে নিয়ে দোতলায় ড্রইং রুমে ঢুকে গেল অশান্ত। সেখানে ল্যাংড়া মজিদ,বগা বরকত,রগ কাটা হাবিবসহ আরো কয়েকজন পরিচিত পুলিশ ও নেতাকর্মীদের দেখতে পেল সে।
ল্যাংড়া মজিদ মৃদু স্বরে অশান্তকে ডাক দিল। সে জানে খবরটা শোনার পর অশান্ত হয়ত ভয়ঙ্কর দানব হয়ে উঠবে। ওর এই অবস্থায় তারা চান ভাই ছাড়া কেউ ওকে দমাতে পারবে না।
-আচ্ছা অশান্ত,মানুষের জীবনে কি অনেক দুর্ঘটনা ঘটেনা?
-ঘটে ভাই,এই কথা জিজ্ঞ্যাইতাছেন ক্যান?
-তোর জীবনে ঘটছে না?
-আরে শালা! কয় কি ভাইজানে! ঘটব না ক্যান,এইতো, গত বছরইতো গুলি খাইয়া মইরা যাইতে নিছিলাম। খালি তারা চান ভাই আছিল দেইখা বাঁইচা গেছি।
-এহন এই তারা চান কি সারা জীবন তোরে আগলাইয়া রাখব? নাকি তোর নিজেরও জীবনে কিছু হইতে হইব?
-হেডা যখনকার বিষয় তহন দেহা যাইব। এসব কথা এহন কইতাছেন ক্যান?
-মনে কর,তোর তারা ভাইরে কেউ মাইরা ফালাইছে। তুই কি করবি তারে?
প্রশ্নটা শুনে পলকে অশান্তর হাত পকেটে রাখা পয়েন্ট থ্রি-টু ক্যালিবারের কাছে চলে গেল। মুখে কেমন যেন একটা ভয়ঙ্কর পশুর মত দৃষ্টি তৈরি হয়েছে । সেদিকে তাকিয়ে ঘর ভর্তি মানুষ একই সাথে শিউরে উঠল। শুধু ল্যাংড়া মজিদ,বগা বরকত আর রগ কাটা হাবিবের চোখের পাতাও নড়ল না।
-ওই মাদারচোদের বাচ্চারে ওর মার সাউয়া দিয়া রিটার্ন পাঠাইয়া দিমু এইহানে বইয়া।
গলা খাকাড়ি দিল ল্যাংড়া মজিদ। কৌটার ফাঁক দিয়ে যখন ধোয়া বেরিয়েছে,তখন কৌটার মুখ খুলে দেওয়াই ভাল। সারা ঘরভর্তি লোকের দিকে তাকাল একবার ল্যাংড়া মজিদ। তারপর স্থির চোখে তাকাল সে অশান্তর দিকে।
-গতকাল রাইতে তারা চানরে রেব ক্রসফায়ারে মাইরা ফালাইছে।


দুইদিন পর। সন্ধ্যার পরমূহুর্ত, অশান্ত ভার্সিটির সামনে বসে রয়েছে। সামনে প্রায় নিরিবিলি রাস্তাটায় কখনো কখনো দু’চারজন লোক হেঁটে যাচ্ছে। গন্তব্য বাসার দিকে। তাদের হাটার মধ্যে কিসের যেন রাজ্যের ব্যস্ততা। ভার্সিটি এরিয়ার একটা বদনাম আছে। তা হল যখন-তখন এখানে ছাত্ররা পথচারীদের আটকে ছিনতাই করে।
অশান্ত যেখানে বসে রয়েছে তার পাশে একটা বড় বিল্ডিং। সেখানে বড় বড় ভর্তি পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। সেই বিল্ডিং-এর উঠোন পেরোলেই ছোট-খাট একটা মাঠ। তারপর তিনটা চা আর একটা ফুচকার দোকান। তারপর একটা পুরোন পোস্টারের ঘায়ে ক্ষত-বিক্ষত দেয়াল। কত লেখা যে এই দেয়ালে ঝুলানো হয়েছে তার নীরব স্বাক্ষী এই দেয়াল। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সেইসব লিখা মৃদু মত করে পড়া যাচ্ছে। যদিও নতুন করে চুনা মারা হয়েছে। তবুও প্রাচীন এক অন্যরকম আভিজাত্য ঝড়ে পড়ছে সেই দেয়ালের প্রতিটি স্তরে।
তার মাঝে অশান্ত যেন এক হয়ে মিশে গেল।
বাআন্নর আন্দোলন,মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস,ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে আসা ঢাকার বাইরের অসহায় গরীব বাবার গ্রাম্য সন্তান, সবার রক্ত যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সেই দেয়াল।
তার উপর নতুন করে চুনা মেরে কি লাভ? বরং কাটা ঘায়ে লবণের ছিটা হচ্ছে যেন।
তারা চান ভাইয়ের কথা মনে হল অশান্তর আজ। এই দেয়ালের পাশে দাড় করিয়ে সরকারী ঝাপসা সাদা ল্যম্পপোস্টের আলোয় বেশ কয়েকজন ছাত্রকে খুন করেছিল তারা ভাই। ছাত্রগুলো রাজনীতির নামে প্রায়শই শিক্ষকদের রগ কেটে হত্যা করত।
তারা চান ভাই,সেই তারা চান ভাইকে আজ কোথাকার কোন রেবের দল নিয়ে ক্রসফায়ার করে হত্যা করেছে।
হঠাৎ উঠে দাঁড়াল অশান্ত। হেটে ঘর হতে রঙের ডিব্বায় রাখা কালি আর ব্রাশ নিয়ে এল।
নিরিবিলি এ রাস্তার সেই ঐতিহাসিক দেয়ালে নিজের মনের গহীণে জমানো কঠোর সত্য কথাটি লিখল অশান্ত।
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় রুখে দাঁড়াও ক্রসফায়ার


এর জন্য অনেক বড় করে একটা মিটিং ডাকতে হবে। কারণ ইদানিং অনেকেই ক্রসফায়ারে পড়ে জীবন হারাচ্ছে। রেবের এই অহেতুক বাচলামী বন্ধ করতে হবে। মাস্তানদেরও একটা জীবন আছে,সেই জীবনে স্বাধীনতার প্রয়োজন আছে।
সুতরাং,আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারী টিএসসির সামনে মিটিং বসবে। বাংলাদেশের মাস্তান সংঘদের কেন্দ্রীয় মিটিং।
অনুষ্ঠানের নামও ঠিক করে ফেলল অশান্ত।

OPERATION UNIVERSITY FIRE

অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ারে অনেকেই যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রন পেল। এমনকি যারা মাস্তান নয় তারাও।
আজ ১৩ফেব্রুয়ারী। বিকেল হতে টিএসসির আশপাশ পুরো দখলে নিয়েছে অশান্ত বাহিণী। সাধারণ লোকজন ও ছাত্রদের চলাফেরা বন্ধ নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য। বিশাল বড় কাঁচের সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে অনুষ্ঠানের মঞ্চ হিসেবে। প্রধান অতিথি থাকবেন এ সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং বাংলাদেশের আতঙ্ক জনাব মিঃ কালা জাহাঙ্গীর।
বাদ্যগায়কীরা যন্ত্র আর গান বাজাচ্ছে মৃদু ছন্দে। আশেপাশে পাহাড়ার নামে ভয়ঙ্কর চেহারার বিদঘুটে সব মাস্তানরা ওপেন সিক্রেট অস্ত্র হাতে মহড়া দিচ্ছে। টিএসসির চত্বরে মূর্তির উপর বিশাল করে তারা চান ভাইয়ের ছবি। তার পাশে জাতীয় নেতা প্রয়াত এরশাদ শিকদারের ছবিও স্থান পেয়েছে।
সন্ধ্যার সময় ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় অনুষ্ঠান শুরু হবে। এ অশান্তর একান্ত ইচ্ছা। অন্ধকার জগতের কাজকারবার অন্ধকারে করাই ভাল। তবে আলোচনা শেষে ডিনারের সময় আলোর ব্যবস্থা থাকবে। প্রধান অতিথি কালা জাহাঙ্গীর তাঁর নিজস্ব হেলিকপ্টারে করে আসছেন কিছুক্ষণের মধ্যে। অশান্ত শান্তভাবে মঞ্চে উঠে প্রধান অতিথির পাশে তার নিজের জন্য বরাদ্দ রাখা সিটটায় বসে আছে। তার সমস্ত বন্ধু-বান্ধব,ভাই-ব্রাদার,নেতাকর্মী এবং ঘুষখোর আমলারা একে একে আসছে।
মানুষের সমাগম দেখে মুগ্ধ হল অশান্ত। সে যা চেয়েছিল তাই হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের দুইটা মূল উদ্দেশ্য আছে। সেটা সে আর তার গুটিকয়েক বন্ধু ছাড়া কেউ জানে না।
এক- সে চায় তারা চান ভাইয়ের নামে প্রতি বছর সন্ত্রাসী পুরস্কার চালু করতে। কিন্তু যেহেতু জাতির নেতা মরহুম এরশাদ শিকদার এবং বর্তমানে কালা জাহাঙ্গীরের মত নেতা আছেন। তাই তাঁদের বাদ দিয়ে কিছু করলে মাস্তান সমাজ হয়তো রাজী নাও হতে পারে। তাই সে কালা জাহাঙ্গীরকে রাজী করিয়েছে। একই সাথে তিনিও নিজের নামে একটি পুরস্কার চালু করবেন। তিনি নেতা মানুষ, তার কথা শুনে নিশ্চয়ই অমত করবে না কেউ।
দুই- তাদের অনেকলোক রেবের হাতে ক্রসফায়ারে মারা গিয়েছে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। তারা সরকারী পর্যায়ে আবেদন করবে। ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। দরকার হলে মিটিং-মিছিল করে আরো কিছু রক্ত যাবে। তবুও মাস্তানদের প্রতি রেবের এই ঘাড় ত্যাড়ামীভাব দূর করতে হবে।
এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটা বক্তৃতাও দিল অশান্ত। সাথে সাথে মাস্তানের দল তুমুল কড়তালী দিয়ে সমর্থন জানাল। তাদের মুখে শোনা যেতে লাগল-

“ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় রুখে দাঁড়াও ক্রসফায়ার,
রেবের গুলির ঠোঙ্গায় ফিরিয়ে দাও অত্যাচার।”
রেবের প্রতি যদিও মাস্তানদের অনেক রাগ। তাই বলে অবশ্য রেবদের সুযোগ পেলেও মারা যাবে না। তাহলে একই সাথে সরকার,মানুষ এবং প্রশাসনকে খেপিয়ে তোলার মত হবে ব্যপারটা। সাধারণ মানুষ রেবের প্রতি পুরোপুরি আস্থাশীল।
ঘড়ির দিকে তাকাল অশান্ত। সন্ধ্যা হয়েছে সবে। মাগরীবের আজান পড়েছে মসজিদে। সে নামাজ পড়ে না। মাস্তানদের অধিকাংশই নামাজ পড়ে না। তবে মহিলা হলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে অন্তত সামান্য ধর্মীয় কায়দা মানা যেত।
তাদের এ সভায় কিছু পুলিশও আসবে। এই পুলিশরা তাদের চামচার পর্যায়ে চলে গেছে।
আসলে তাদের না,তাদের টাকার চামচা হয়েছে আরকি।
অশান্তর মেজাজ শান্ত রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ সন্ধ্যার পরপর অনুষ্ঠান শুরু করার কথা। কিন্তু প্রধান অতিথি আসেন নি। অনুষ্ঠান শুরু করে কি করে?
আচমকা অশান্তর একই সাথে ক্ষোভ ও কান্না পেল। তারা চান ভাইয়ের জন্য সে আজ কিছু করতে পারছে। তাঁর নাম মাস্তান সমাজ যুগে যুগে মনে রাখবে এই পুরস্কারের মাধ্যমে।
হঠাৎ আকাশ হতে ঘুডঘুড-ঘুডঘুড শব্দ শোনা গেল। অশান্ত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটি নীল-সাদা রঙের হেলিকপ্টার দেখতে পেল। তীব্র সার্চলাইটের আলোয় টিএসসি আর মঞ্চ যেন জ্বলজ্বল করতে লাগল।
তার মোবাইলে রিঙ এল এ সময়। কালা জাহাঙ্গীর রিঙ করেছেন।
-হ্যালো স্লামুলাইকুম ভাইজান।
-হরে ভাইজান,আমি আইয়া পড়ছি। হবায় তোর মাথার উপরেই আছি,নামতাছি।
-ধন্যবাদ ভাইজান, আপনারে অসংখ্য ধন্যবাদ।

রেবের কার্যালয়ঃ
গোপন মিটিং চলছে। পেট মোটা আর মাথা মোটা এক লোক বড় চেয়ারটায় বসে বসে নাক খুটছেন। তাঁকে ঘিরে বসে আছে অনেকগুলো রেব সদস্য এবং রেবের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
সময়টা বসন্তের শেষের দিকে কখনো গরম লাগে,আবার কখনো শীত লাগে। এখন গরম লাগছে। তাই ভিতরে এসি চলছে।
তাছাড়া মনে হচ্ছে এখনি কিছু একটা অর্ডার করবেন পেট মোটা আর মাথা মোটা লোকটা। এ সময় তাঁর কন্ঠস্বর নড়ে উঠল,
-শালারা নাম কি দিয়েছে? অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ার?
-জ্বি স্যার,(লম্বা বকের মত গলাওয়ালা এক লোক বলে উঠল) শুধু তাই নয়, ছাত্রদের ধরে ধরে মারার প্ল্যান করছে নিশ্চয়ই। সবগুলো ওই তারা চান আর এরশাদের মতই বদমাশ!
-কে বদমাশ,আর কে হারামজাদা, সেটা আপনার মত বকের গলার না বললেও চলবে। আমি এমনিতেই বুঝতে পারি।
-স্যার, (মোটা বেঁটে মতন এক লোক বলে উঠল। তার নাকের নিচের গোফ কাঁটায় সম্ভবত গড়বড় হয়েছে। এ কারণে একপাশে ছোট আর অন্যপাশে বড় মনে হচ্ছে) কালা জাহাঙ্গীরের এখানে আসার উদ্দেশ্য কি হতে পারে?
-নিশ্চয়ই আমাদের ক্রসফায়ারের বদলা নিতে চায়। আচ্ছা, সে দেখা যাবে। মিস্টার মোখলেছ,আপনি এখনি আপনার সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয়ে নিন। রুই-কাতলাগুলো যেন একটাও পালাতে না পারে। অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ার না? আমি এই অপারেশনের নাম দিলাম-

OPERATION T.S.C CROSFIRE

পরের খবর অতি সংক্ষিপ্ত। রেবের দল গোপন সূত্রে খবর পেয়েছে যে দেশের সমস্ত মাস্তানরা রেবের ক্রসফায়ারের বদলা নিতে চায়। একই সাথে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রাতের অন্ধকারে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তাই তাদের মিশনের নাম দিয়েছে- অপারেশন ইউনিভার্সিটি ফায়ার।
তাই এই সমস্ত অঘটন ঘটানোর আগেই। যে কয়টা সম্ভব রেব ক্রসফায়ার কিংবা এনকাউন্টার করে হত্যা করেছে।
খবরে প্রকাশ- বিখ্যাত মফিজ তারা চানের প্রধান সহযোগী অশান্তকে সহ তার আরো অন্যান্য সহযোগীদের রেব হাতেনাতে অস্ত্র এবং গোলা-বারুদসহ গ্রেফতার করেছে। এ সময় অশান্ত আরো অস্ত্রের সন্ধান আছে বললে রেব সদস্যরা তাকে নিয়ে পুরোন ঢাকার টিকাতুলীতে যায়। পথিমধ্যে অশান্তর ওত পেতে থাকা সহযোগীরা অশান্তকে মুক্ত করার জন্য রেবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়।
অশান্ত পালিয়ে যেতে নেয়,কিন্তু পথিমধ্যে সে গোলাগুলির মাঝখানে থেকে প্রাণ হারায়।
তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অবশিষ্টঃ কালা জাহাঙ্গীরকে রেব ধরতে পারে নি। তার হেলিকপ্টারে হানা দিয়ে রেব দেখে শুধু পাইলট আছে,আর তার অনুসারীদের কারো দেখা নেই। সম্ভবত সেই অশান্ত আর তার দলবলকে ধরিয়ে দিয়েছে। নিজেকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিপক্ষদের ভাল জবাব দিতে জানে কালা জাহাঙ্গীর।

Sunday, March 21, 2010

জিয়া উদ্যেনে লীলা করতে যেয়ে ফ্রি মাইর!

আমার বন্ধু,নাম না বললেও চলবে। গিয়েছিল জিয়া উদ্যেনে একটা গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে।
ধরি ওর নাম রৌদ্র। তো ঘটনা শুনেতো আমি অবাক। ওর মত ছেলে কিনা জিয়া উদ্যোনে ঘুরতে যায়,তাও আবার মেয়ে নিয়ে!!
খোজ নিলাম ভালভাবে,জানতে পারলাম তার পুরো ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে সে ফেসবুকে চ্যাট করছে। হঠাৎ বাংলাদেশী একটি মেয়ে,ধরি তার নাম নাসরিন, তো এই নামের মেয়েটির সাথে পরিচয় হয়।
অনেকদিন ধরে চ্যাটা-চ্যাটি। একপর্যায়ে মেয়েটির নাম্বার পায় আমার সেই রৌদ্র নামের বন্ধু।
তারপর খেয়ে না খেয়ে দুইজনের মধুর আলাপ। উল্লেখ্য, আমার বন্ধুটির জীবনে কোন মেয়ে আসেনি। তাই সে নাসরিনের সাথে খুব বেশী জড়িয়ে গেল। ইমোশন আর কাকে বলে!
আমার কাছে চুপিচুপি জানাল যে মেয়েটির পিছনে সে অলরেডী ২,৫০০ টাকা খরচ করে ফেলেছে। আমি শুনলাম,কিছু বলিনি। শুধু উপদেশ দিয়েছি যেন দেখে শুনে পথ চলে।
এরপর অনেকদিন রৌদ্রের সাথে আমার দেখা নেই। হঠাৎ দেখা হল সেদিন মিরপুর এক নাম্বারের ওভারব্রীজের উপর। তাকে দেখে চেনাই যায় না এমন অবস্থা।
কি সমাচার জিজ্ঞ্যেস করায় আমাকে সব খুলে বলল। আমার এলাকার ছেলে-পিলেগুলো আবার আমাকে মানে খুব।
রৌদ্রের সমস্যা হল একটা কথা বলতে যেয়ে আগে-পরে করে ফেলে। তাই তার ভাষায় না দিয়ে আমি নিজের উক্তিতে তুলে ধরছি ঘটনাটা।
বৃহস্পতি বার রৌদ্রের কলেজ নেই। দুপুরবেলা সেই নাসরিন ওকে কল করে জানাল যে বিকেলে সে দেখা করতে চায়। রৌদ্র তো এমনি একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল এতদিন।
কোন রকম মুখে চারটা দুপুরের ভাত গুজে দিয়ে স্মার্ট হয়ে সেজেগুজে রওনা দিল জিয়া উদ্যোনে।
ছুটির দিন নয়,তাই মানুষও কিছুটা কম। রৌদ্রের কাছে অন্তত এটাই ভাল মনে হল। নাসরিন বলেছে সে চকলেট কালারের একটা শাড়ি পরে আসবে। রৌদ্র কাল রঙ্গা জিন্টসের সাথে বেগুনী একটা শার্ট পরেছে। পায়ে আধুনিক স্ন্যাকের জুতা।
পকেটে দামী এলজি আইফোন টাচ,আর অবশ্যই বেশী করে মেয়েটিকে চাইনিজ কিংবা ভাজা মুরগী(চিকেন ফ্রাই) খাওয়ানোর মত মোটা চামড়ার মানিব্যাগ।
যথারীতি মেয়েটি এল, আগেই মোবাইলে আলাপ হয়েছিল।
রৌদ্র দেখেই চিনতে পারল এই তার ফেসবুক নন্দিনী। দেখতে বেশ সুন্দরী বলা চলে। পরনে শাড়ির উপর কাল ব্লাউজ স্পষ্ট যৌবনের ইঙ্গিত করছে। সারা মুখে কেমন যেন গোপন করা একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে পড়েছে। তার মাঝে ঝকঝকে সাদা দাতের হাসি সাদা টুথপেষ্ট পেপসুডেন্ট কোম্পানীর বিজ্ঞাপন চিত্রের মত মনে হল রৌদ্রের কাছে।
উভয়ে একে অপরকে “হাই,দেখা পেয়ে খুব খুশী হলাম, স্বপ্নেও ভাবিনি এতটা মজার হবে” ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন তরুণ প্রজন্মের ডায়ালগ দিল। তারপর এক প্রস্থ বাদাম খেতে খেতে নিজেদের কথা এবং পরিবারের কথা চলল। কথা বলতে বলতে কখন যে সন্ধ্যা হয়েছে তা রৌদ্রের কিংবা বোধ করি নাসরিন নামের মেয়েটিরও মনে নেই।
মানুষজন ততক্ষণে কমে এসেছে। উদ্যোনে গাছ-পালা আর রাতের পূর্বাগমনের আভাস ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
এ সময় কোথা হতে চারজন হিজড়া এসে দাঁড়াল। শুরু হল ফাইজলামী আর বদমাইশি। রৌদ্র আর নাসরিন এদের হাত থেকে নিজেদের ছাড়াতে যেয়ে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে,তখন বিদায় নিল হিজড়াগুলো।
যাক বাবা,বাঁচলাম! বলে যেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে গেল দুইজন,ঠিক তখনি সামনে এসে দাঁড়াল একদল বাইদানী (মহিলা সাপুড়ে)। দুইজনকে বলল যে তাদের অবশ্যই সাপের খেলা দেখতে হবে,তা না হলে কাউকেই ছাড়া হবে না।
রৌদ্রের মাথা হঠাৎ গরম হয়ে গেল। রেগেমেগে বলল,
-তোমগো সাপ তোমগো সাউয়ার মধ্যেই রাখ। আর একবার ডিস্টার্ব করবা তো দেইখো কি করি।
কিন্তু বাইদানীরা রৌদ্রের কথা শুনে তেমন পাত্তা দিল বলে মনে হল না। বেটে মতন বাইদানীটা তখনই ঝোলা খুলে সাপ বের করল। বের করে সেটা হাতে নিয়ে রৌদ্রের দিকে এগিয়ে এল।
রৌদ্র আর নাসরিন দুজনেই ভয় পেয়ে হঠাৎ উল্টো দিকে ছুটতে শুরু করল। বাইদানীদের সেকি হাসি। মনে হয় রাতের জিয়া উদ্যোন শুধুমাত্র সংখালঘুদের জন্যই।
খানিকদূর দৌড়িয়ে দুইজন যেই না প্রধান দরজার সামনে এসে থেমেছে,তখন কোথা হতে যেন একগাড়ি পুলিশ এসে নামল সেখানে।
হাতে-নাতেই ধরা পড়ল ধাবমান দুই যুবক-যুবতী।
শুরু হল পরবর্তী কৈফিয়ত। কেন এই রাতের বেলা মেয়ে নিয়ে জিয়া উদ্যোনে এসেছ?
কেন আবার এখন দৌড় দিচ্ছ? তাও আবার মেয়েটিকে ফেলে রেখে?
কি কর,কোথায় থাক? এই সমস্ত প্রশ্ন করে দুইজনকেই ঘাবড়ে দিল পুলিশের দল।
ফলে সঠিক উত্তরের চেয়ে তোতলামী বেশী হয়ে গেল রৌদ্রের।
আর যায় কোথায়! পুলিশের হাতের ডান্ডা! তাও আবার লাইসেন্স করা!
ঠেকাবে কে? শুরু হল দমাদম হাতে পায়ে ওপেন সিক্রেট মার!
সঙ্গের টাকা-পয়সা,মোবাইল,মানিব্যাগ এমনকি পায়ের জুতা পর্যন্ত খুলে ঘুষ দিয়ে আসতে হল রৌদ্রকে।
তবুও শান্তনা। ইজ্জততো বাঁচল!
বাসায় পৌছার পর সিমটা তার মায়ের মোবাইলে লাগাতেই নাসরিনের নাম্বার থেকে কল এল হঠাৎ। খানিক্ষণ জিদের চোটে রিসিভ করল না রৌদ্র।
এই মেয়েটি একটা কুফা! একে নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে এতসব ঝামেলা এবং সম্পদ গচ্চা গেছে।
তবুও শেষ পর্যন্ত রিসিভ করল রৌদ্র। হ্যালো বলতেই যা বলল নাসরিন শুনে রৌদ্রের মাথা ঘুরে গেল।
নাসরিন বলল যে এ পর্যন্ত যেসব হিজড়া,বাইদানি এবং পুলিশ এসেছে সবই তার নিজস্ব লোক।
এসব লোকদের দিয়েই সে এ ধরণের ধান্দা করে। ফেসবুকের মত আরো কয়েকটি সাইটে তার বিভিন্ন নামের প্রোফাইল আছে।
সেখানে রৌদ্রের মত গর্দভ ছেলেদের ধরে বোকা বানানো হয়।
তারপর নাসরিন মাফও চাইল রৌদ্রের কাছে। এটা নাকি সবার থেকেই চাওয়া হয়। যাতে কেউ মনে কষ্ট না রাখে।
আর রৌদ্র,সে কষ্ট রাখবে কি?
কি ঘটেছে ঠিক মত তাই মনে করতে পারল না।

ওয়েবসাইট আর পত্রিকার মারামারি!

মিরপুর এক নাম্বারের টেকনিক্যাল। তারপর বাংলা কলেজ,পানির ট্যাঙ্কি,আনসার ক্যাম্প এবং এক নাম্বার।
টেকনিক্যালের মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের জন্য একটি মোবাইল পুলিশ বক্স আছে। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি এক ছিড়াছিড়ি অবস্থা শুরু হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ বক্সের গায়ে বিডিনিউজ২৪ এর বিশাল বিজ্ঞাপণ। তার উপরে একটা ছোট কাগজে প্রথম আলো পত্রিকার বিজ্ঞাপণ।
প্রথম আলোর বিজ্ঞাপণ তরঙ্গে একটি ছবি। তাতে একটি মহিলা সিটের অভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং তিনজন লোক মহিলাদের সিটে বসে রয়েছে। উপরে লাল রঙে লিখা আছে- “বদলে যাও,বদলে দাও।”
অন্যদিকে বিডিনিউজ২৪ এ কিছু কম্পিউটারের ছবি,তাতে ওয়েবপেজ হিসেবে দেখা যাচ্ছে শুধুই বিডিনিউজ২৪কে, সেখানে আবার ডায়ালগ দেয়া হয়েছে- “সব কিছু বদলে দিতে নেই।”
প্রথম আলোর উদ্যেগ অবশ্যই ভালো উদ্যেগ। কিন্তু আজকাল আমাদের দেশের মহিলা কিংবা তরুনীরা কোন পুরুষের ধার ধারেনা। তারা যেখানে যার সাথে যে অবস্থায় জায়গা পায় সেখানেই বসে পড়তে পারে। তবে পানের পিক ফেলার ব্যপারটিতে প্রথম আলোর স্বার্থকতা প্রমাণ পেয়েছে।
গাড়ি সিগন্যালের পিছনে রাখা,বাদামের খোসা ঠোঙায় ভরে রাখা এসব বাঙালীর ধাঁচে বিন্দুমাত্র নেই। সুতরাং এইসব ঢোল পিটিয়েও দেশের মানুষকে বুঝানো যাবে কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে।
আর ওয়েবসাইটের কথা নাই বললাম। আমি মিরপুর এক নাম্বারে গেলেই এক ভাই জোর করে বিডিনিউজ২৪ এর কার্ড হাতে দিয়ে দেবেন। তাতে তাঁর খুব মজা লাগে।
স্বল্প মূল্যের পোষ্ট প্রদানের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বড় আকৃতির রুই-কাতলা পেতে ভিজিট করুন- http://www.blogvoice.tk

Saturday, March 20, 2010

নৌকার উপর ধান

বিষয়টি ভাবার মতই বটে,বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে তো নৌকার উপর দিয়ে ধান বহণ হতেই পারে না!
পারে টাকা।
কাড়িকাড়ি টাকা!
-যে টাকা পেলে ভাইকে হত্যা করতে দ্বিধা থাকে না,
-বোনকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়া যায়,
-যে টাকা পেলে মাকে আর কোনদিন সন্তানেরা আচল ধরে টান দিয়ে বলেনা “মাগো,তোমার ছেলে এসে গেছে।”
সেই টাকা!

কত্ত নৌকা যায় এ গাঁ থেকে ওই গাঁয়ে! আমি একবুক আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকি। এই বুঝি আমাদের শষ্য-ফসলাদি যায়।
কিন্তু না।
দিন,মাস এমনকি বছরও যায়। তবুও আমি সেই সম্পদ দেখি না। দেখি শুধু নৌকা ভরা টাকা।
ওদিকে ধানের যে বেলা হয়ে এল। সে বুঝি আর ফিরে এল না।
তাকিয়ে দেখি একি সর্বনাশ!
চারপাশে অথই জল। মাঝে ধান তো বড় একলা হয়ে পড়েছে। আমি নদী বক্ষের মাঝে চরে তাকিয়ে দেখি শুধু ধানের ছড়াছড়ি।
এত ধান!
দেশে বুঝি এবার ধানের প্লাবন লেগে গেল।
আমি আশায় বুক বেঁধে তাকাই। হ্যাঁ, সবই ঠিক আছে।
এবার নিশ্চয়ই আবার নৌকা ভর্তি ধান যাবে।
সোনালি-রুপালী আলোয় রোদে ঝিকঝিক করবে সেই জ্বলন্ত ধান।
যেই না আমি নৌকায় উঠলাম,অমনি অমন সোনা ঝড়া রোদ্দুর যেন কোথায় মিলিয়ে গেল। আকাশ ডেকে উঠল গুড়ুগুড়ু মেঘের শব্দে। প্রচন্ড বাতাসের তোড়ে নৌকা যেন দিক হারাতে চাইল।
আমি বললাম-ঠিক আছে নৌকা, তুমি এর উপযুক্ত ফল পাবে।
বলে আমি চরে নামলাম। ধান ছাড়া প্রকৃতি যেন হাসতেই চায় না।
যোদ্ধার চকচকে তরবারীর ন্যায় সে যেন দিপ্তি ছড়াচ্ছে।
আমি তাকে নৌকায় উঠালাম। অমনি ধানের সেই উজ্জ্বল দিপ্তি বাতাসে মিলিয়ে গেল। আর সোনা ঝড়া রঙও বুঝি রইল না।
ঠিক আছে ধান, তুমিও এর ফল পাবে।
নৌকার মাঝি,আর ধানের চাষী। সকলে যেন উদগ্রীব হয়ে আছে। কখন হাটে যাবে আর কখন টাকার থলে নিয়ে গাঁয়ের পথে রওনা দিবে।
আমি তাদের নৌকায় উঠালাম। তারপর ভাসিয়ে দিলাম নৌকা মাঝ নদীতে।
নৌকার দুলুনি বেড়ে গেল,ধানের উজ্জ্বল রঙ বর্ণহীন হয়ে গেল।
চাষী আর মাঝিও চেঁচিয়ে বলল-আমাদের ফিরিয়ে নাও। বড্ড ভুল হয়ে গেছে।
কিন্তু কোন লাভ হল না। নৌকা,ধান,মাঝি আর চাষী সকলেই মাঝ নদীতে অথই জলের অতলে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আর কি আশ্চর্য!
যেই না নৌকা আর ধান হারিয়ে গেল, অমনি তাকিয়ে দেখি চারিদিকে আজ যেন ঈদের মত খুশীর আমেজ। সারা দেশ,মানুষ আর ফুল-পাখিরা যেন প্রাণ ফিরে পেল। আকাশে তখন মেঘ ডাকছে; দেবদারু গাছে বসে অনবরত ডেকে চলছে নাম না জানা একটা পাখি।

নারীর পেটে সমাজের বাচ্চা! (৪পার্ট একসাথে)

নারীর পেটে সমাজের বাচ্চা!
পার্ট-১

মাঝে মাঝে আমাদের বাসার সামনে দিয়ে বিভিন্ন হকার প্লাস্টিকের মাল স্বল্প মূল্যে বিক্রির জন্য চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুলে। এদের সাথে বর্তমানের তরুণী মেয়েদের কোন পার্থক্য আমি দেখতে পাই না।
তবে হ্যাঁ,কিছু মেয়ে আবার এর চেয়েও নিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। এমনটা অবস্থায় বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশের প্রতি আফসোস করা ছাড়া কোন গতি নেই।
মেয়েদের জন্মের পর সর্বপ্রথম যে মারাত্নক ভুলটা করছেন গুরুজন এবং সূধিমন্ডলীরা তা হচ্ছে ছেলেদের সাথে মেয়েদের সহশিক্ষার ব্যবস্থা করে।
আধুনিক মননশীলতার মেয়েরা যাই বলুন না কেন সহশিক্ষা হল মেয়েদের নিজেকে বেশ্যাবৃত্তির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার শামীল। একটা ছেলের সংস্পর্শে এসে মেয়েরা উছৃঙ্খল এবং অশালীন আচরণের সৃষ্টি করে। অথচ তারা দাবি করতে চায় ছেলে আর মেয়েরা পাশাপাশি না দাঁড়ালে নাকি জাতি উন্নতি এবং আশার আলো দেখতে পাবে না!
তাদের পাশাপাশি একই সূত্রে কাজ করার মধ্যেই নাকি সমস্ত কল্যাণ নিহত!
যদি সত্যিই তাই হত,তাহলে আমি আমার মা-বোনকে পাঠাতাম কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশে স্থান নেওয়ার জন্য।
তাঁরা যতই গুণ কীর্তন করুন সহশিক্ষার,এই সহশিক্ষার ফলেই অল্প বয়সী চেঙরা ছেলে-মেয়েরা অবৈধ প্রেম-ভালবাসায় জড়িয়ে পড়ে। ফলে একটি মেয়ে তার নিজের সর্বোচ্চ সম্পদ কুমারীত্ব দান করে একটি ছেলেকে যৌবনের নেশায় নেশাগ্রস্থ করে তোলে। তখন থেকে শুরু হয় ছেলেদের এ যৌনতার নেশা।
এর মূলে মেয়েদের বিভিন্ন উত্তেজক অঙ্গভঙ্গি ও বেপর্দা চরমভাবে প্রমাণিত।
অথচ এ সাধারণ,অথচ নিখাদ বাস্তব কথাটি নারী সমাজের কেউ স্বীকার করতে চান না। বরং তাঁরা উল্টো দাবি করে বসেন নারীর অধিকার ও সম্মানের কথা!
এ কথা সবাই জানে যে নারীও মানুষ,আর মানুষ মাত্রই সকলের সম্মান-অসম্মান রয়েছে। তাহলে তাঁদের আবার নতুন করে কি ধরনের সম্মান কিংবা অধিকারের দাবি থাকতে পারে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
এ ধরনের দাবি করে নারীরা যদি নিজেদের পুরুষের সমকক্ষ বানানোর চিন্তা-ভাবনা করেন তবে তা পাগলামী ছাড়া কিছু নয়।
এ কথা ঠিক যে একসময় নারীদের উপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে,কিন্তু সেই অন্ধকার যুগ এখন দূর হয়েছে। কাজেই এ সময়ে যদি নারীরা পুরুষদেরকে অধিকারের মত একটি অসামান্য বিষয়ে বিরক্ত করেন তাহলে শুধু আমি নই,আরো অনেকে ভাবতে বাধ্য হবেন যে নারীরা পূর্ব ইতিহাসের প্রতিশোধ বৈকি কিছু নিচ্ছেন না।

আলোচনার এই পর্যায়ে আমি একটু অন্য বিষয়ে যাচ্ছি। দেশে অনেক কর্মপ্রতিষ্ঠান আছে যেখানে নারীরা চাকরী করেন। অনেকে আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়েও বেশী বেতনাদি পেয়ে থাকেন। আমরা মুসলিম জাতি। এ কথা আমরা শুধু মুখে দাবি করি, তাই কেউ যদি কখনো ইসলামের বিষয়ে ভাল কোন ফতোয়া দেয় কিংবা হাদিস বলে,তাহলে কোন প্রকার দ্বিধা না করে আমরা সাথে সাথে তাকে মৌলবাদিদের দলে ফেলে দেই। আমাদের মুসলিমদের-ই যখন এই অবস্থা,তখন ভারত,বৃটেন কিংবা আমেরিকা প্রায়ই শুধুমাত্র সন্দেহের বশে মুসলিম আচরণের লোকদের গণহারে যেভাবে টেরোরিস্ট বলে মেরে ফেলছে তাতে আমি কোন দোষ দেখি না।
কারণ এ গল্পতো আমরা সবাই জানি যে ভাইয়ে ভাইয়ে যখন ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকে,তখনই তো আশেপাশের প্রতিবেশী শত্রুদের আক্রমণের সুবর্ণ সুযোগ আসে।
তো,সেই সব বড় বেতন পাওয়া নারীরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে যেভাবে ঢলাঢলি করে সোহাগ মাখা কথা বলেন তা বোধহয় স্বামীর সাথেও বলেন না। ইসলামের বোরখার বিধানতো তাঁরা মানেনই না,বরং উল্টো সামান্য আবেগের বশে তাঁরা বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত উভয় অবস্থাতেই অবৈধ প্রেম-ভালবাসায় জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ভয়ংকর জ্বীনা পর্যন্ত করে বসেন।
কেউ যদি কখনো তাঁদের বোরখা পড়ার আদেশ বা অনুরোধ করে,তখনই দল বেঁধে শুরু হয়ে যায় নারী জাগরণ,নারী আন্দোলন,নারী উন্নয়ন সহ আরো কত প্রতিষ্ঠান!!!
খোলা পিঠে,খোলা বুকে,খোলা মুখে চলাফেরা করে যখন তাঁদের এত সুখ, নগ্ন দেহে চলাফেরা করে না জানি তাঁরা কত শান্তি পাবেন!
অনেক নতুনধর্মী সংস্কার বিরোধী আছেন যারা বলেন,নারী-পুরুষ একত্রে শিক্ষা,কর্ম এবং জীবন নির্বাহ করলে দেশের উন্নয়নে অশেষ অগ্রগতি হবে।
সেই সব সংস্কার বিরোধীরা বোধহয় বাংলাদেশকে নারী দূষণে ভরিয়ে আমেরিকার মত উন্নত করে ফেলতে চাইছেন। যাতে করে জীবনের অর্ধেক সময় সেই পাশ্চাত্যবাসীদের মত বয়ফ্রেন্ড আর স্বামী বদলে বাঙ্গালী মেয়েদেরও হান্ড্রেড পুরুষের পার্সেন্ট অভিজ্ঞতা হয়!!!
অবশ্য তাঁরা বলে থাকেন নারী-পুরুষের মন ঠিক থাকলেই হল। তাহলে আর পাপ কাজের সৃষ্টি হবে না।
কিন্তু একটা কথা কি পাঠকরা জানেন?
চোখের সামনে তেতুল দেখলে জ্বিবে পানি আসবেই-
আর নারীরা যে হারে বোরখা পড়া বন্ধ করে যে রকম শারীরিক চলাফেরা শুরু করেছেন। রাস্তায় বেরোলে আমার প্রায়ই ভ্রুম হয়,কে আসছে, আমার আন্টি না বোন?
কাছে থেকে দেখে শিউর হই,আন্টিও না বোনও না, তাদের কাজের বুয়াতো অবশ্যই!
আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যদি হতে পারি,তাহলে আর কোন উন্নয়নের জোয়ার হোক কিবা না হোক,আগে পুরুষদের বোরখা পরিধান বাধ্যতামূলক করে দেব।
নারীরা তো তখন আন্দোলন নিয়েই ব্যস্ত, ব্যস, পুরুষরাও ঘরে বসে থেকে নারীর আয়-উপার্জন ভোগ করবে।
যাই হোক,এতক্ষণ তো কেবল একতরফাভাবে মেয়েদের-ই দোষ ধরলাম। আরেকটা দোষ যে এই নারীদের দোষকে মারাত্নকভাবে বাড়িয়েছে এবার তা নিয়ে বলা দরকার।
এ কথা অবশ্য অনেকের ধারণাতেই আছে।
বিষয়টা হল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে টিভিতে ব্যবহৃত হওয়া স্যাটেলাইট চ্যানেল সমূহ। এ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সিংহভাগ অংশ জুড়ে আছে ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেল।
তাদের চ্যানেলগুলোতে এখন এত বেশী অশ্লীল দৃশ্যাবলী দেখাচ্ছে যে তা দেখে নবম-দশম শ্রেণীর কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রেম থেকে অবৈধ সম্পর্ক গড়ছে এমনকি এসব কারণে আত্নহত্যাও করছে। এই জানুয়ারী মাসেও বাংলাভিশন চ্যানেলের রিপোর্টে আমি এই আত্নহত্যার মত করুণ সংবাদ দেখেছি।
এখন আমি যদি সরকারকে অনুরোধ করি এইসব ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলো সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য,তাহলে দেশের মানুষ আমাকে জুতা দিয়েও পিটাতে আসতে পারে।
কারণ ইসলাম কিংবা পরকাল,এ দুটির কোনটিই মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করবে না,প্রবেশ করবে বর্তমান সময়ের আনন্দ-বিনোদন চিন্তা।
আমাদের এক বড়ভাই আছে যে মানুষকে বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করেন। কেউ যদি বলে-ভাই,আজ টাকাটা আমার দরকার,কাল দিব। তাহলে ওই ভাই বলেন-আরে বেডা কাইলকা বাঁইচা থাকলে সেনা তোর টেকা খামু। যদি মইরা যাই তেয়লেতো খাইতে পারুম না। তুই এহনি দিবি।
মানুষের হিসাবও এখন এই রকম।
অবশ্য আমিও যে টিভি চ্যানেল দেখি না তা নয়,কিন্তু আমার মত কয়জন আছে যারা এসব দৃশ্যাবলী দেখে মনকে কুরুচিপূর্ণ কামনা থেকে নিবৃত রাখতে পারবে?
পারবে না বলেই আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষ করছে ওয়েব সেক্স। নারীরাও এই ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে আছে।
হেন কুরুচিপুর্ণ দৃশ্য নেই যা নারীরা করছে না। পুরুষের সাথেও তাদের মন ভরেনি বিধায় জন্তু-জানোয়ারের সাথেও তারা দৈহিক সম্পর্ক শুরু করেছে। এ কেয়ামতের আলামত ছাড়া কিছুই নয়।
নেটে প্রায় প্রত্যেকটা সাইটই নারীর এসব অবৈধ যৌনদৃশ্য আপলোড করছে। সেখানে পাশ্চাত্যের পাশাপাশি বাঙালী,পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়ার সেক্স ভিডিও-ও স্থান পেয়েছে গর্বের সাথে।
নারীরা সামান্য কারণে যদি এভাবে পুরুষের সাথে বিবাহপূর্ব অবৈধ যৌন সম্পর্ক শুরু করে,তাহলে হয়তো শেষ পর্যন্ত আমার মত পুরুষও নিজেকে শিকলের বেড়াজালে ধরে রাখতে পারবে না।
হাজার হোক,আমিও মানুষ। পাপের উর্ধ্বে নই আমিও।
কাজেই দেশ থেকে প্রথমে সমস্ত বিদেশী নারী সংস্থা দূর করে দিতে হবে। নারী-পুরুষ যাতে রাস্তা ঘাটে প্রেম ভালবাসায় মজতে না পারে সেজন্য সরকারকে কঠোর আদেশ জারী করে দিতে হবে যাতে রাস্তায় এমন ঘটনা কেউ একবার করলে দ্বিতীয়বার আর করার হিম্মত না হয়।



নারীর পেটে সমাজের বাচ্চা!
পার্ট-২

ভাইরে, গত পোষ্টে প্রথম পর্ব দিয়েই আমার আক্কেল হয়েছে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে দেশে কিছু সমালোচনাকারী আছেন যারা কেউ কোন নীতির চর্চা করলে তাকে সমাজবিরোধী কিংবা মাদ্রাসার ছাত্র বলে গণ্য করে দেবেন। তাঁরা আমাকে পাগল বলে ঠাউরেছেন গত পর্বে। দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে তাঁদের ঘরের মা-বোনদের সম্ভবত তিনি সেই একই লাইনে ছেড়ে দিয়েছেন।
তাঁদের বিচারবুদ্ধির ওজন নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তাঁরা আমাকে শুধু গালাগালিই করেছেন, কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলেছেন যে আমার মানসিক হাসপাতালে যাওয়া উচিত।
একজন ব্লগারকে যদি তার লেখার জন্য মানসিক হাসপাতালে যেতে হয়, তাহলে তাঁরাও তো ব্লগে লেখালেখি করছেন। এখন আমিও কি তাঁদের পাগল ভাবব?
তাঁরা এও বলেছেন যে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তাঁদের দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে আমি কোন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করি নি, করেছি সাধারণ স্কুলে।
তাঁদের মত বিদ্রোহী ব্লগারদের জন্য আমি যদি আমার মন্তব্য প্রকাশ করতে না পারি, তাহলে আপনারাই বলুন সমাজের অশান্তির জন্য দায়ী কারা?
এজন্যই বলে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। তাঁরা একে তিল থেকে তাল বানাতে চাইছেন। আমার মনে হয় পাবনা হাসপাতালে তাঁদের সিট পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমারই সাহায্য করা উচিত।

বি.সি.এস IT Fair-2010 এর শুরু থেকেই যাই যাই করে যাওয়া হচ্ছিল না। বন্ধু-বান্ধব অনেকেই ঘুরে এল কিন্তু আমি সময় করতে পারলাম না। এর মধ্যে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু কলিন্স-এর কম্পিউটার আসুসের মাদারবোর্ডের সিডি মিরপুরে কোথাও খুজে পেলাম না। তাই বাধ্য হয়ে দুইজন গেলাম বিসিএস আইটি ফেয়ারে। মেলা বলতে বরাবর আমরা যা দেখে আসছি তার সম্পূর্ণ আঙ্গিক-ই পাল্টে দিয়েছে এই মেলার আয়োজক এবং প্রযোজকরা।
কারণ সারা বছর বিসিএস কম্পিউটারে ভবনে যা দেখা যায় ঠিক তাই আছে।
না হয়েছে এর কোন পরিবর্তন,না হয়েছে এর নতুন কোন আকর্ষন।
কারণ গতানুগতিকভাবে এ ভবনে যে সমস্ত কম্পিউটার ও এ সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি থাকে তার কোন পরিবর্তন করা হয়নি এ মেলায়।
তবে হ্যাঁ, পরিবর্তন হয়েছে দুইটি। যা সবাই উপভোগ কিংবা ভোগ করেছেন।
এক, মেলা নাম দিয়ে পণ্য সামগ্রি বিক্রির জন্য লোভনীয় গলা কাটা অফার।
দুই, যদি বলে একটা কথা আছে না। সেই যদির জন্য যদি পণ্য বিক্রি কমে যায়, না সে রিস্ক কিছুতেই নিবেন না বিসিএস কম্পিউটার মেলার আয়োজকরা। তাইতো দোকানে দোকানে পণ্যের বদলে এসেছে নিত্য-নতুন সদ্য যৌবনাপ্রাপ্ত যুবতী নারীগুলো। পণ্যের চেয়ে তারা অনেক বেশী মূল্যবান সম্পদ!
যারা কিছু কিনবেন না, তাঁরাও একবারের জন্য হলেও ঘুরে যাবেন বিসিএস কম্পিউটার ফেয়ারে। স্বয়ং আমার বন্ধু এসে আমাকে বলল যে বিসিএস মেলায় নাকি সুন্দরী মেয়েদের অর্ধউলঙ্গ এভারেস্ট পাহাড় দেখা যায়!
পাবলিক যারা দেখতে আসবে,তারাও মেয়েদের দেখে গদগদ হয়ে আর তাদের ছোলানো-চোবানো কথা শুনে হয়তো দুই/একটা পণ্য কিনবে, এই আশ্বাস ছাড়া আর কি দিতে পারে ওই সমস্ত একাধিক প্রেম করে হিন্দুদের দেবী বনে যাওয়া মেয়েগুলো?
মানুষের কথা আর কি বলব, স্বয়ং আমার বন্ধু একজন এসে আমাকে বলল বিসিএস আইটি ফেয়ারে নাকি মাত্র বিশ টাকা দিয়ে মেয়েদের পাহাড় দেখা যায়।
সেই দিনই সে গিয়েছিল ওই মেলায়।
আমি যে একেবারেই দুধে ধোয়া পবিত্র মানুষ তা নয়, তবে বিসিএসে গিয়ে আমি আর কলিন্স দশ মিনিট পরই বেরিয়ে গেছি সিডিটা কিনে।
শুধুই কি বিসিএস? বাণিজ্য মেলা থেকে শুরু করে ডেসটিনি-২০০০ লিঃ,বিভিন্ন এনজিও কোম্পানী সবখানেই মেয়েদের চাহিদা অকল্পনীয় বেশি।
আমার এক বড়ভাই বলেন- তোর কি আছে যে তোকে চাকরি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিবে? মেয়েদের নিচ্ছে এবং নিবে কারণ তাদের ওইটা(!!!) আছে। তোরতো আর ওইটা নেই।
আমি ভেবে পাইনা এর কারণ কি?
পরীক্ষা করবেন?
ফেসবুকে একটা একাউন্ট খুলুন যে কোন মেয়ের নাম দিয়ে। দেখবেন স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে কয়েক হাজার ছেলে আপনার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
আর ছেলে নাম দিয়ে খুলুন,কেউ আপনার প্রোফাইলে ভিক্ষা দিতেও আসবে না।
এই দোষ শুধু তাদের নয়, আমার-আপনার সবার।
কেন আমাদের চরিত্রের এই অধপতন বলতে পারেন?
থাক, আমি জানি এখানে খুব বড় বড় কথা বলে রাতের আধারে আমার কামোত্তজনাকে আমি দমন করতে পারব না। তবে এটা ঠিক, আল্লাহ যদি রহম করেন আর কোনদিন কান্দুপট্টিতে যাওয়া হবেনা। হয়তো হস্তমৈথুন করা হবে অসংখ্যবার।

সমাজের আলোচনায় আসি, আমাদের বাঙ্গালী জাতির একটা সুনাম আছে। তা হল যে আমরা একগুঁয়ে জাতি,বিশেষ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকলে আমরা সবাই কম-বেশী রুখে দাঁড়াতে জানি।
তো,পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তাদের নির্দিষ্ট একটা অংশকে আমি দুই ভাগে ভাগ করেছি। একটি হল, আরাপাগলা জাতি,আর অপরটি পাগলা জাতি।
আমাদের বাঙ্গালী জ়াতিরা হল আরাপাগলা জাতি। তাদের তেমন সম্পদ-সম্ভার নেই। কিন্তু মোটামুটি কৃষ্টি-কালচার আছে।
কেউ যদি আমাদের এই কৃষ্টি-কালচার দখল করার চিন্তা করে, অমনি আমরা এর জন্য মহা স্বরগোল তুলে নিজেদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করতে সচেষ্ট হই। যার প্রমাণ আমাদের ভাষা আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ইত্যাদি।
এ সংগ্রাম শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও একটি উল্লেখযোগ্য আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
অথচ অন্যদিকে আমাদের দেশীয় স্বচ্ছলতা এবং সমৃদ্ধির অবস্থা একেবারেই করুণ। নিজেরাই যখন খেতে পাই না, তবুও কোন কারণে আমরা আমাদের স্বল্প একটু সম্পদ কিংবা বিপদে মাথা গোজার ঠাই যাই বলি না কেন, সেইসব বিদেশে অঢেল হস্তে পাচার করে দেই।
এ শুধু গ্যাস ইন্ডিয়ায় পাচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়,বরং বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে খাদ্য-শষ্য পর্যন্ত আমরা ডলারের আশায় রপ্তানী করি।
ডলার তো আর কম হল না! তাহলে এখন লাগামহীন উর্ধমুখী খাদ্যমূল্য স্থিতি হচ্ছে না কেন?
আমি মনে করি যে দেশে বাইনচোদ মানসিকতার লোকজন নেতাগিরি ফলায়, সে দেশে কস্মিনকালেও কোন উন্নতি হবে না।
ওদিক দিয়ে আমেরিকা, বৃটেনের মত পাগলা জাতিরা যদিও পায়খানা থেকে প্রাপ্ত সত্তুর দশকের পিতলের বদনা শুধু মাত্র এনটিক মূল্যের কারণেই লাখ লাখ ডলারে বিক্রি করে, তবুও তাদের মাথায় কিছু প্রতিভা তো অবশ্যই আছে।
তারা স্বপ্ন দেখে দেশ এবং মানুষকে বদলে দেওয়ার। আর আমরা স্বপ্ন দেখি দিনকে বদলে দেওয়ার।
উদ্দেশ্য এক,প্রয়োগ ভিন্ন।
যাই হোক,রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। আলোচনা করতে চাই সমাজ এবং নারী বিষয়ে।
ব্লগার ভাইদের কাছে একটি অনুরোধ, যদি পারেন তাহলে আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করেন যে খোলা পিঠের মেয়ে কিংবা মহিলা যেখানেই থাকুক। বাড়িতে,অফিসে কিংবা পার্টিতে,তাদের পিঠের মধ্যে যদ্দুর জোরে সম্ভব চটাশ করে থাপ্পর মেরে দিবেন।
আর যদি তা না পারেন তাহলে আমার কাছে খবর দিবেন। আপনার লজ্জা ঢাকবার জন্য দেশে আমি ইনশাআল্লাহ পুরুষদের বোরখা পরিধানের ব্যবস্থা করব।
গত সংখ্যার লেখা যারা পড়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমি পুরোপুরি পুরুষবাদী।
ভুল, আমার মধ্যেও কামনার লেলিহান শিখা জ্বলজ্বল করে দীপ্তি ছড়ায়।
কামের উত্তেজনায় আমিও অধির হয়ে বঙ্গের মাতাল রমণীদের আশায় অস্থির হয়ে যাই।
কিন্তু গত চার বছরের সেক্সুয়াল জীবনে আমি মাত্র একবার এক কান্দু পট্টিতে যেয়ে অপি নামের পনের বছর বয়সী এক মেয়ের সাথে যৌনলীলা সাঙ্গ করেছি,তাও মেয়েটি আমাকে বিষেশভাবে অনুরোধ করেছে বলেই। কিন্তু আমি তারপরেই বাসায় যেয়ে এই ভেবে ভয়ে অস্থির হয়েছি যে একদিন তো আমাকে মরতেই হবে। তখন আল্লাহ কি আমাকে ছাড়বেন?
তখন তো গরুর গোশত যেভাবে পার্ট পার্ট করে ঝুলানো হয়,সেভাবে ঝুলিয়ে আমার আর ওই মেয়েরটা পুড়ানো হবে।
কিন্তু আজকের বাঙ্গালী ললনাগুলো কিভাবে যে বাবা-মায়ের মাথা কেটে বয়ফ্রেন্ড কিংবা লাভারের সাথে সেক্স করে তার ভিডিও টেপ বের করে ব্লুটুথ এবং ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়!!
এসব সমস্যাগুলো দিনদিন প্রকট আকার ধারণ করছে। অথচ বাবা-মায়েরা তেমন হুশিয়ার হতে পারছে না।
হলেও আধুনিক যুগের মেয়েরা ফু মেরেই বাবা-মাকে বোকা বানাচ্ছে।
রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে সকল স্থানে চলছে অবৈধ অসামাজিক কার্যকলাপ।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা,সামাজিক ব্যপক দুর্নীতি এসব বাংলাদেশ থেকে কস্মিনকালেও দূর হবে কিনা সন্দেহ আছে আমার।
দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবুন একবার। সত্তর দশকে বাংলাদেশ,ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের প্রযুক্তি তথা ফিল্ম শিল্প ছিল একই রকম সমগোত্রীয়।
অথচ আজ এই দিনে এসে বাংলাদেশ এমন পর্যায়ের ছবি তৈরি করছে যা দেখে ভদ্র এবং সূধী দর্শকরা ব্যাঙ্গের হাসি ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারছেন না।
এর ব্যর্থতার মূলে বাংলাদেশ সরকার। সরকার যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব আরো আগে কোন বেসরকারী সংস্থাকে দিয়ে দিত,তাহলে সেখানে প্রচুর ইনভেস্ট হত এবং দেশের চলচ্চিত্রের এই ধ্বস আমাদের বিংশশতাব্দীর লোকদের দেখতে হত না।
তবুও আশার কথা এই যে ইদানিং দেশে বিকল্প ধারার ফিল্ম তৈরি হচ্ছে যা দর্শক দ্বারা প্রশংসিত। তবে এক্ষেত্রে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর অবদান অনস্বীকার্য।
তারা ছবি তৈরির সময় কাহিণীতে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করে। তবে তারা শুধুমাত্র ইনভেস্ট এর অভাবে একটা সুন্দর কাহিণীকে প্রয়োজনমত এনিমেটেড করতে পারে না। তাছাড়া দেশের ক্যামেরাগুলো ততটা উন্নত প্রযুক্তির নয় যতটা উন্নত হলিউড-বলিউডে ব্যবহৃত হয়।
ইন্ডিয়ার সিরিয়াল কিংবা ছবিগুলোর প্রিন্ট সাধারণত অত্যন্ত ঝকঝকে হয়। এছাড়াও তাদের কাহিণী একটানা দর্শককে ধরে রাখতে পারে।
ফলে দেশীয় অনেক দর্শকই বাংলা চ্যানেল ছেড়ে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল কিংবা নাটক দেখতে বেশী পছন্দ করে।
এ ব্যর্থতা আমাদের একার নয়, গোটা দেশের।
(চলমান)


নারীর পেটে সমাজের বাচ্চা!
পার্ট-৩




গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। আমি আর আমার বন্ধু পনির (ছদ্বনাম) মিরপুর এক নাম্বারে রাত দশটার সময় বসে ফুচকা খাচ্ছিলাম। শীতের রাত, মানুষজন একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরে যাচ্ছে। ফলে রাস্তা-ঘাট বেশ নির্জন হয়ে পড়েছিল। এ সময় একটা বেশ সুন্দরী মেয়ে আমাদের কাছে এসে দাঁড়াল।
পাশে বসে ফুচকা খেতে খেতে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করতে লাগল। পনির প্রথমে ব্যপারটা বুঝতে পারল না। খানিক বাদেই বিষয়টা সে পরিস্কার বুঝতে পারল। তার মাথায় শয়তান নাড়া দিয়ে উঠল।
নির্লজ্জ আগ্রহ নিয়ে মেয়েটাকে এক নজরে দেখতে লাগল। বুঝতে পেরে মেয়েটাও উৎসাহিত হয়ে উঠল।
সে কোনরকম সঙ্কোচ ছাড়াই পনিরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে তার নাম জিজ্ঞেস করল।
শুরু হয়ে গেল তাদের আলাপ। আমি পনিরের কানে ফিসফিস করে বললাম,
-এসব মেয়েরা মোটেও ভাল নয়, পটিয়ে নিয়ে সব রেখে দিবে।
-কি করে?
-ওদের পরিচিত ছেলের দল আছে, যাদের মাধ্যমে তারা বেকুব পাবলিককে ফাঁদে ফেলে।
পনির আমার কথা বিশ্বাস করল না। বলল,
-কিযে বলিস না! মেয়েটার চোখ দেখেছিস? কি রকম মায়াময় চাহনী। ওর সাথে আমি ফ্রেন্ডশীপ করতে চাই।
সেরেছে! মনে মনে ভাবলাম আমি। পনিরতো পুরোপুরি গেছে। তাও আবার রাস্তার ধান্দাবাজ মেয়ের পাল্লায়।
আমি মেয়েটার চোখের দিকে তাকালাম। সন্দেহ নেই, বেশ সুন্দরী। কিন্তু চোখগুলোয় অস্বাভাবিক কিছু যেন আছে। কি সেটা ধরতে পারলাম না আমি। ফলে সেখানেই সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে গেল।
খানিকবাদে মেয়েটার বাসা চিনার জন্য পনির নিজ হতে যেচে পড়ে বলল,
-এত রাতে আপনি একা একা বাসায় যাবেন, সমস্যা হতে পারে তো। চলুন আপনাকে পৌছে দিয়ে আসি।
মেয়েটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
-না থাক, তার দরকার হবে না।
তবুও পনির কিছুক্ষন জোড়াজুড়ি করতে মেয়েটা রাজী হয়ে গেল। মেয়েটার নাম দিনা। সম্ভবত ভাওতা একটা নাম। বাসা নাকি স্টেডিয়ামের পিছনে।
আমি পনিরকে নিষেধ করতে লাগলাম। তবুও ও মেয়েটার বাসা চিনার জন্য দু’পায়ে দাঁড়িয়ে গেল।
ওরা দুইজন এক রিক্সায় উঠল,আমি আলাদা একটা রিক্সায় উঠলাম। মিনিট দশ পরে স্টেডিয়ামের সামনে রিক্সা থামল।
হেঁটে আমরা স্টেডিয়ামের ভিতর দিয়ে পিছন অংশে চলে এলাম। গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় আচমকা কয়েকটা ছেলে সামনে এসে দাঁড়াল। সবার হাতে ছুরি।
আমি আর পনির যা বুঝার বুঝে নিলাম। মেয়েটার ব্যবহার এবার হল দেখার মত। অস্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে পনির আর আমাকে কলার ধরে টেনে পাকা স্লাপে বসাল। তারপর শুরু হল এ্যাকশন। জোর করে চার/পাঁচটা থাপ্পর মেরে আমাদের দুইজনের মোবাইল আর ক্যাশ টাকা পয়সা রেখে দেওয়া হল।
সেই থেকে পনিরের শিক্ষা হল। মেয়েটার পেশার প্রশংসা করতে হয়। নিজের রূপের যোগ্যতায় সে ধান্দা করে বেড়াচ্ছে।
ঢাকা শহরতলীতে এই ধরনের অসংখ্য মেয়ে রয়েছে। অবশ্য এই পেশা ছেড়ে ওইসব মেয়েদের হিজড়াদের পেশা ধরা উচিত হবে আমি মনে করি।
রাতের অন্ধকারে আর ধান্দা নয়, দিনের আলোয় ডাকাতি করতে সুবিধা হবে তাদের।
কোন রিস্কও নেই।
গত পরশু দিন একটা বিশেষ দরকারে রাত এগারোটায় মিরপুর মাজারে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখতে পেলাম সেকি এলাহী কান্ডরে বাবা!
মাজারের প্রাঙ্গনে রাতের শো বসেছে। দর্শক হল কুলি-মজুর থেকে কামলা,মিস্ত্রি এবং রিক্সাওয়ালা সবাই আছে। খাজা বাবার ওরস উপলক্ষে গানের আসর। ঘোষক ঘোষনা দিল,
-খাজা বাবার গুন কীর্তন করতে স্টেজে আসছেন বাউল গায়িকা মমতাজ বানু।
দশ মিনিটের জন্য আমি থমকে দাঁড়ালাম কি ঘটে দেখার জন্য।
স্টেজে উঠে এলেন গায়িকা মমতাজ বানু। গান শুরু হল আউলা চুল নাচিয়ে নাচিয়ে।

ওরেও প্রাণ সোহাগী,ওরেও রসের ভাগি,
আইজকা কোন দিবস,
ধনের রাজা,প্রাণের রাজা
খাজা বাবার ওরস।
ওরে,রান্ধ যত পোলাউ-কোর্মা,রান্ধ যত ফির্নি,
তারচেয়ে মজা হায়রে খাজা বাবার শিন্নি।
গানের তালে তালে কিছু মুরুব্বি গোছের শুভ্র দাঁড়িওয়ালা লোকেরাও নাচছে। মাজারের মেইন গেটের সাথেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মাজারে অনেকটা উৎসবের আমেজ। এক মহিলা বাউল গায়িকার গানই ভরিয়ে দিচ্ছে হাজারো মন্ডাভুক পুরুষের হৃদয়। মহিলার গলাটাও দশাসই।
বাজী ধরে বলতে পারি, কোন ভাঙ্গা বনের ফাটা বাশে যে আওয়াজ হয় তারচেয়ে কম হবে না।

আমাদের আজকের বাঙ্গালী বোনেরা আর নায়ক রিয়াজকে পছন্দ করে না। করে ম্যাট্রিক্স কিংবা অ্যাভাটর (AVATAR) ছবির নায়ককে, বলিউডের কিং খানকে তো অনেকে পছন্দ করা ছেড়েই দিয়েছেন। বয়স বেড়ে গেছে বলে কথা।
এখন তাঁদের পছন্দ নায়ক ইমরান হাশমী কিংবা রণবীর কাপুরকে।
দুই চারজন বান্ধবী মাঝে মাঝে আমাকে বলে তাদের জীবনের সেরা স্বপ্নগুলোর কথা। সেই স্বপ্ন হল পছন্দের নায়ককে জড়িয়ে ধরে লিপকিস করা, আর পারা গেলে তাদের সাথে এক বিছানায় রাত যাপন।
এখন আমার বান্ধবীদের মত আর কেউ যে এ দেশে নেই তা আমি স্বীকার করছি না।
অবশ্যই আছে। কিন্তু পুলিশ কি দেশের সব চোরদের ধরে প্রকাশ্য হাইকোর্টে চোর প্রমাণ করতে পারবে?
অধিকাংশই তো রয়ে যাবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
যাই হোক, কথা তা নয়। মেয়েদের বিষয়ে পুলিশকে টানা উচিত হবে না।
তাঁরা দেশের মহান কারিগর। বর্ষার সময় তাঁরা শুধু নৌকায় চড়েন, ওই সময়ে ধান না খেলেও চলে তাঁদের।
অবশ্য মন্দার সময় তাঁরা শুধু ধান খান। পর্বত প্রমাণ পানি আসলেও তখন তাঁরা নৌকায় উঠেন না।
আপনাদের এই মূহুর্তে একটা ধন্যবাদ দিতে চাই। না দিলে আমি ছেলে নিমকহারাম বলে গণ্য হব।
আপনাদের অনুপ্রেরণার পর আমি এই প্রবন্ধটি পার্ট আকারে প্রকাশে উৎসাহ পেয়েছি।
আশা করি সমালোচকরা আমাকে নিয়মিত পাগল বলবেন, (হাজার হোক,আমার গোত্রীয় বংশ কিনা!) আর যারা আমার গুণগান গেয়ে আমাকে এই ছিঁড়া-ফাড়া পথে চলতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের আমি কথা দিচ্ছি, আগে পিছে আমি তাঁদের সাথেই থাকব। (একই পথের পথিক)
যাক, বহুত রসকষ হল। এবার কার কি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনায় আসি। একটা গোপন কথা বলতে চাই।
সেটা হল, এই যে আমি মেয়েদের নিয়ে আশেপাশের এত ঘটনা লিখছি, এ ধরণের ঝুলি ভড়া এক্সপেরিয়েন্স আমার নিজেরও কিন্তু যথেষ্ট আছে। কিন্তু আমি এই ভেবে ভয়ে লিখছি না যে, একেতো অন্যের ঘটনা লিখাতেই তেনারা রেগে ফায়ার হয়ে আমাকে বিশিষ্ট সম্মানিত হিসাবে ঘোষনা করেন, আর যদি আমি নিজের ঘটনা লিখি, তাহলেতো কাজ সারা!
তেনারা এবার বলবেন যে আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে মেয়েদের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছি।
তো দেশে যদি তেনাদের মত ওভার স্মার্ট, মাদ্রাসা পড়ুয়াহীন জলকুস মাস্টার না থাকত তাহলে আমি অবশ্যই অন্তত আপনাদের সৌজন্যে লিখতাম।
পাইকপাড়ায় ফারিয়া নামে আমাদের ফ্রেন্ডের এক বান্ধবী আছে। তার চেহারাটা আমার কাছে বেশ মায়াময় মনে হত।
কি কারণে আমি জানি না, এখনো মেয়েদের দেখলেই তাদের মুখে আমি রাজ্যের সরলতা আর চঞ্চল হরিণীর মত মায়াবী চাহনী দেখতে পাই।
সবাইকে তো আমি ভালবাসি না, তাহলে কেন সবার প্রতি এই মিছে আদর মিশ্রিত শুভেচ্ছা?
তবে কি এটা কারেক্টর লুজ?
না, তাহলে সেই সব তেনাদের মত আমিও মেয়েদের মুখে না তাকিয়ে আগে বুকে তাকাতাম।
তো সেই ফারিয়া যখন প্রেগনেন্ট হল, আমিতো অবাক। তাও আবার এস.এস.সি পরীক্ষা দেওয়ার অনেক আগেই।
আমার সেই ফ্রেন্ডটাই যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তার কোন গ্যারান্টি নেই। কারণ ওই ফ্রেন্ডের মত অন্তত আরো চার/পাঁচটা বয়ফ্রেন্ড আছে ফারিয়ার। তাদের যে কারো দ্বারাই তো এ ঘটনা ঘটাতে পারে ফারিয়া, নাকি?
এরপর সর্বশেষ ফারিয়াকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী অবাক হলাম গত বছর এস.এস.সি পরীক্ষা শেষে। ফারিয়া একবার নয়, দুইবার নয়, তিন তিনবার গর্ভবতী হয়েছে!
শেষের দুইবারই ফ্যামিলির হাতে ধরা এবং উত্তম মাধ্যম খেয়েও কুকুরের লেজ বার বছরে সোজা না হওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে।
আমার এ কথা বলার উদ্দেশ্য হল এই, একজন মানুষ, তা সে ছেলে হোক কিবা মেয়ে হোক। জীবনে যদি সে কখনো কঠিন কোন ঢুশ খায়, তাহলেই তার হুশ হয়ে যায়।
তবুও কিছু বেলায়েক,বেত্তমিজ তো থেকেই যায় শিক্ষার বাইরে। এখানে তারই উদাহরণ দিলাম।
আর ভাল লাগছে না। বিশ্বাস করুন, মেয়েদের এসব কুৎসা রচনা করার ইচ্ছে মোটেও আমার নেই।
কিন্তু তাদের কিছু চামচ আছে, যারা মেয়েদের নামে কিছু শুনলেই বাংলা ছবির নায়কের মত “তোর এত্ত বড় সাহস!” বলে ঝাপিয়ে পড়ে। আমি আসলে তাদেরই হুংকার শুনতে চাই।
পাশাপাশি যদি বাংলার নারীরাও নিজেদের গায়ের গন্ধ দূর করার একটু চেষ্টা চালায় আমার এ চামার মার্কা লেখা পড়ে, তো মন্দ কি।
এটুকু তো ভাবতে পারব। বাংলাদেশে আমার লক্ষ-কোটি মা-বোনেরা, যাদের শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতা মহান একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন, সেই সব মহৎ প্রাণ লোকের কন্যাদের আমিই সঠিক পথে এনেছি।
অবশ্য তেনারা,
মানে যেইসব চামচের কথা বললাম, তারা যদি বাঁধা দেয়,তাহলে তারাই নিজেদের কর্মের জন্য একদিন নিজেরা ইয়া নাফসি করবে।



নারীর পেটে সমাজের বাচ্চা!
পার্ট-৪


সেদিন সহশিক্ষা এবং সহকর্মী হিসাবে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের থাকার খুবই গুরুত্ব দিয়েছিলেন আপনাদের অনেকে। এখন যেই ঘটনা বলব তা শুনে আপনারাই বিচার করবেন যে সহকর্মী হিসেবে মেয়েদের প্রয়োজন কতটুকু।
বেশ কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম মিরপুর দুই নম্বরে এক বিখ্যাত সুপার ভ্যালুশপে, ঢুকেছিলাম কিছু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। ভিতরে যেয়ে দেখি ছেলেদের চেয়ে মেয়ে কর্মীর সংখ্যাই বেশী। বেশীরভাগই পার্টটাইম জব করছে,স্টুডেন্ট তারা।
যেখানে কসমেটিকস পাওয়া যায় সেখানে এগোলাম আমি।
সুপার ভ্যালুশপে শোরুমের ভিতরেই গুদাম বা গোডাউনে যাওয়ার আলাদা দরজা থাকে,সেখান দিয়ে তাদের নিজস্ব লোকজন আসা-যাওয়া করে।
হঠাৎ সেখানের এক দরজায় আমার নজর আটকে গেল। জায়গাটা মিরপুরের সনি সিনেমা হলের পাশে বিখ্যাত সুপারভ্যালু শপের একেবারে ভিতরের দিকে। একটি মেয়ে,শপের কর্মী। হাতে কাগজ নিয়ে দরজা ঠেলা দিয়ে ঢুকল।
দরজার ফাঁক দিয়ে আমি স্পষ্ট একটা ছেলের হাত বেড়িয়ে আসতে দেখলাম। ছেলেটা মেয়ের গায়ের শার্ট ধরে সজোরে টান দিয়ে নিজের বুকের কাছে নিয়ে এল।
তারপর তাদের মাঝে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেল। আমি ফিসফাস শব্দ আর উত্তেজিত ভঙ্গির কথা-বার্তা শুনতে পেলাম।
বুঝতে পারলাম তারা একজন আরেকজনকে পছন্দ করে।
ছেলেটার হাত পলকে পলকে মেয়েটার শরীরের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। এভাবে প্রেম করে কোন লাভ নেই মেয়েটা কি তা বুঝছে না।
দেখা গেল পরে ছেলেটার কিংবা মেয়েটার পরিবার কেউ হয়তো বিয়েতে মত দিবে না।
আর আজকালকার মেয়েরা তো আর দুধে ধোয়া পানি নয়। তারা পুরুষের মতই এন্টারটেইনমেন্ট করতে পছন্দ করে। তাইতো কমবেশী সকল আধুনিক উগ্র মেয়েদের একাধিক বয়ফ্রেন্ড এবং সিঙ্গেল একটা লাভার অবশ্যই থাকে।
অবশ্য দুই/চারজন অতিবমেয়ে আছে। মানে তারা সম্ভবত ভুল ক্রমে পৃথিবীতে মেয়ে হয়ে এসেছে। কিন্তু তাদের আচার-আচরণ দেখে শুনে মনে হয় পরিপূর্ণ ছেলে। ভাগ্যিস তারা ছেলে হয়ে আসেনি বলে রক্ষা।
আসলে আর খবর থাকত না। যৌবনের শুরুতেই নিশ্চয়ই যৌন হয়রানিতে শীর্ষে উঠে গিনেস বুকে নাম লিখাত।
ওই সব মেয়েগুলোর ধারণা যার যত বেশী লাভার,তার তত বেশী ক্রেডিট। ক্রেডিট বুঝেন তো,তাহলে নাকি ওই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কাউকে চিন্তা করতে হবে না। সে একাই ছেলেদের ভেজে খেতে পারবে।
এই ধরণের মানষিকতার মেয়েরা যে কি করে আমাদের মত সমাজে আমাদেরই প্রশ্রয়ে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় তা আমার বোধগম্য নয়।
আপনাদের আশেপাশে তাকালেই বুঝতে পারবেন তাদের সংখ্যা কি আকারে বেড়ে গেছে।
এর মূল কারণ আমাদের সংস্কৃতি নামের মিডিয়ার বিভিন্ন বেহায়াপনা। তা আমি আগেও একবার উল্লেখ করেছি। এ সম্পর্কে আপনাদের হয়তো পরিপূর্ণ ধারণা নেই,কি করে মিডিয়া আমাদের তরুণ-তরুণীদের নষ্ট করছে।
ইদানিং আমরা আর সত্তর থেকে আশি দশকের মত ফিল্ম তৈরি করছি না। করছি ইন্ডিয়ার মত নগ্ন কুরুচি দেশের অশ্লীল ধারার ছবি। যার নগ্নতা ও যৌনতার ঢেউ দেখে আমাদের যুবক-যুবতি থেকে শুরু করে বয়স্ক লোকের মনেও প্রভাব ফেলে। তার প্রমাণ আমি নিজ হাতে পেয়েছি।
আমার এক পরিচিত আঙ্কেল আছেন, তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়েন। এলাকায় তাঁর যথেষ্ট সুনাম আছে ভাল চরিত্রের অধিকারি হিসেবে।
কিন্তু তাঁর বাসায় হিন্দি ফিল্ম,গান ও কালচার দেখে দেখে সকলেই রসাতলে গেছে।
তাঁর বড় মেয়ে সবে ক্লাস টেন পড়ুয়া। এরই মধ্যে সে সাতবার লাভার বদলেছে। তার মা, মানে ওই আঙ্কেলের স্ত্রী নিজের দেবরের সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন হিন্দি ফিল্ম দেখতে দেখতে।
আর আমার সেই ভাল চরিত্রের আঙ্কেল সর্বশেষ খবর অনুযায়ী দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন।
সেই আঙ্কেলের হিন্দি সিরিয়ালের প্রতি প্রচন্ড আসক্তি ছিল এবং এখনো আছে।
সুতরাং বুঝতে বাকী নেই যে এই হিন্দি মিডিয়া আমাদের মুসলিম সমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করছে। একদিন আমাদের মুসলমানদের মাঝে যখন আল্লাহ বলার মত কেউ থাকবে না,তখনই কেয়ামত সংঘটিত হবে।
এ কথাও আমরা অনেকে হয়তো ভুলে গেছি। কারণ আমাদের তরুণীরা হিন্দি ফিল্মের নায়িকাদের পাছার দুলুনী দেখে একদিকে,তারা নাড়া দেয় আরেকদিকে।
এসব অশ্লীল বেহায়াপনাযুক্ত দৃশ্যাবলী দেখে সকলের মাথা হয়ে যাচ্ছে বিদঘুটে চিন্তা-ভাবনার অধিকারী। ফলে ইদানিং আমাদের সমাজের নারীদের অধিকাংশ এখন নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বিবাহের পরও নিজের পুরানো বয়ফ্রেন্ড কিংবা লাভারদের যৌন আসক্তি পূরণ করে।
আমার এক ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ডের বান্ধবী (বিবাহিত মেয়ে) নিয়মিত সেই ফ্রেন্ডের যৌন মনোরঞ্জন করে। তার সাথে আমি কয়েকবার কথা বলেছি। এ জন্য তার মনে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। বরং সে গর্ব করে আমার কাছেও এই কুরুচিপূর্ণ কাজের বর্ণনা দেয়।
আমি বর্তমানের নারীদের অবস্থা দেখে শুধু শঙ্কিত নই,বরং ভয়াবহ রকম আতঙ্কিত।
আমি বর্তমানের পুরুষদের একটা কথা বলে রাখছি। আপনারা যারা এখনো বিয়ে করেন নি,তাঁরা শতকরা একশভাগ দুশ্চিন্তাযুক্ত থাকুন যে স্ত্রী তাঁদের কপালে জুটবে তারা কখনোই পরিপূর্ণ কুমারী নয়। বরং তারা সময়ের চাহিদা পূরণের জন্য এক বা একাধিক পুরুষের সাথে ফষ্টিনষ্টি করেছে।
আপনি যদি বাসর রাতে আপনার স্ত্রীকে তার কুমারীত্ব বিষয়ে প্রশ্ন করেন,তাহলে যদি সে সৎ মানষিকতার হয়,তাহলে আপনার কাছে এভাবে কৈফিয়ত দিবে- “বিশ্বাস কর,আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলাম।”
স্ত্রী যখন অশ্রু বিসর্জন দিবে,তখন আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমা না করে পারবেন না। এটা আমার বেলায়ও প্রযোজ্য।
কারণ এ কথা ঠিক যে পুরুষের একটা মন আছে। তবে হিংস্র যে দু’চারজন নেই তা আমি অস্বীকার করছি না। তবে পুরুষের পক্ষে যুক্তি হল তারা তখনই নারীকে আক্রমণ কিংবা আঘাত করে যখন তাদের সীমা ছাড়িয়ে যায়। এ ক্ষমতা যদি নারীকে দেয়া হত,তাহলে যে কি সাংঘাতিক ঘটনা ঘটত!
মেয়ে লোক প্রায় সময় কারণে অকারণে রেগে যায়। তাহলে পুরুষ মানুষকেও কারণে অকারণে মার খেতে হত মেয়েদের হাতে।
আমি যাকে ভালবাসি,তার রাগের সাথে আমার খুব ভাল করে পরিচয় আছে। সে রেগে গেল প্রায় সময় আমার গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেনা। উল্টো এতে সে কেমন যেন অমানুষিক তৃপ্তি পায়।
এ অবস্থা কিন্তু শুরু থেকেই ছিল না। বরং আমাদের সমাজের নানা রকম অসামাজিক আর অনৈতিক ব্যবস্থাপনা মেয়ে তথা নারী সমাজকে এই অধ্বর্মুখে ফেলেছে।
রাস্তা-ঘাটের কথা যদি ভাবেন,দেখবেন অনেক ধান্দাবাজ মেয়েদের দল আছে। তারা সেধে সেধে আপনার সাথে মিষ্টি মার্কা কথা বলবে। তারপর হয়তো হঠাৎ করে আপনার অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে আপনাকে অন্ধকার রাস্তায় নিয়ে চেঁচিয়ে লোক জড়ো করে আপনাকে হেস্তনেস্থ করে আপনার টাকা পয়সা রেখে দেবে।
সুতরাং এ ধরণের ফাঁদ হতে সাবধান থাকবেন। পুরুষ জাতি হচ্ছে মাছের মত। আর নারীরা হল টোপ। টোপ দেখলে মাছ খেতে আসবেই। সুতরাং এই সমস্ত বেহায়াপনাময় এবং বার ভাতারযুক্ত মেয়েদের হতে সাবধান!

সরকারের ফুটোয় স্কুল-কলেজ

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ক্ষতিকর পরিবেশ কোনটি,তা বলতে গেলে আগে আসে স্কুল-কলেজের কথা।
আমাদের স্কুল-কলেজগুলো একটা সময় আক্ষরিক অর্থেই পড়াশোনা করার স্থান ছিল । তখন যদিও এখনকার বিংশশতাব্দীর মত আধুনিক সুবিধা ছিল না,তথাপি সমাজের অশিক্ষা,কুসংস্কার,অপ্রাকৃতিক ভীতি প্রভৃতি দূর করতে এবং প্রকৃত জ্ঞানী হওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল স্কুল-কলেজ। এগুলো আমরা ইতিহাস নাড়াচাড়া করলেই জানতে পারি।
কিন্তু এখনকার এই সময়ে পড়াশোনার মানেই হচ্ছে বিশাল বড় এক কসাইখানা যেখানে ক্রেতার পছন্দ অনুসারে গরুকে বিভিন্নভাবে সাজানো হয়। আমি একটা শিক্ষার্থীকেও খুঁজে পেলাম না যে কিনা চাকরী কিংবা ক্যারিয়ারের জন্য পড়াশোনা করছে না।
পড়াশোনাটা এখন পুরোপুরি ব্যাবসায়ীক।
শিক্ষার্থীরা এই ব্যাবসায়ের ক্রেতা এবং শিক্ষকরা এখানে ব্যাবসায়ী।
তাই আগের মত জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ আর পড়াশোনা করছে না।
নিম্ন মাধ্যমিক পর্বে বাংলা বইয়ে প্রমথ চৌধুরির বই পড়া নামে যে প্রবন্ধটি আছে, আমি তার সাথে একমত। স্কুল-কলেজের বিদ্যা যে কোন মানুষের অন্তরের ইচ্ছাশক্তিকে নষ্ট করে দেয়,ফলে তার আত্নার স্বাধীনতা নষ্ট হয়।
অনেক জ্ঞানী এবং স্থির বুদ্ধিসচেতন ছেলে-মেয়ে আছে,যাদের জীবনে পড়াশোনা হয় না বলে তারা কোন চাকরি পায় না। এ অবস্থায় পিতার যদি কোন সহায়-সম্বল না থাকে,তাহলে ওই সব ছেলে-মেয়েদের জগৎ হয়ে যায় ভয়ঙ্কর অমানবিক কাজ-কারবারের।
আমি বর্তমানের লেখাপড়াকে ঘৃণা করি।
কিন্তু তবুও আমি পড়ছি। কারণ পড়াশোনা করাটা এখন একটা ফ্যাশন। এই ফ্যাশন না করলেই লোকে ভাববে- আহারে, নিশ্চই অভাবী কিংবা অজ্ঞানী পরিবেশের ছেলে।
তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার হল,আমার পিতা চান না আমি আমার পড়াশোনা বন্ধ করে অন্য কোন ব্যাবসায়ীক চিন্তা-ভাবনা করি।
তো যা বলছিলাম, এই যুগের পড়াশোনা,বিশেষ করে আমাদের দেশে স্বশিক্ষার কোন সুযোগ নেই। এখানে সমাজ,সরকার এবং শিক্ষকরা একসাথে গিলিয়ে খাওইয়ে দেন আমাদের মত ছাত্রদের। ফলে কারো যদি বিজ্ঞান,পৃথিবী এবং আধ্যাতিক বিষয় নিয়ে শেখার আগ্রহ থাকে তবে অচিরেই তা বিনষ্ট হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ,বিএনপি কিংবা যে সরকারই দেশ শাষন করছে,তারা কেউ-ই আমাদের পড়াশোনাটাকে পাশ্চাত্যের মত পরিবর্তন করতে পারছে না। বরং পরিবর্তনের নাম দিয়ে বর্তমানে পড়াশোনাকে সম্পূর্ণ খুজলির মলম বানানো হয়েছে।
অথচ পাশ্চাত্যের অন্যান্য সব আচরণ,চিন্তা,সমাজ,শিল্প-সাহিত্য আমাদের খুব প্রভাবিত করে!!
একেই বোধহয় বলে-
গরুর লেজের গোছা পায় না,
পাছা নিয়ে টানাটানি।

তবুও ভাগ্যি! একেবারে পিষেতো মরে যাই নি! শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে তো পারছি!
ওইটা আর সরকারের হাতে দিয়ে দিতে হয় নি।

পৃথিবী বদলে যাচ্ছে,বদলে যাচ্ছে মেয়েরা!

শয়তান আগে শুধু এক প্রজাতিতে বন্দি ছিল,এখন সে ছাড়া পেয়ে গেছে। তার আর কোন বাঁধা কিংবা বাঁধন নেই। সে পুরুষ এবং মহিলা দুইজনের শরীরেই সমাবভাবে বিস্তার করতে পারছে। তবে আজকাল সে বোধহয় মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলাধূলা করছে বেশী। তা না হলে আমাদের মুসলিম সমাজে মেয়েদের এই অধঃপতন কি কারণে খৃষ্টানদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে তা আজকে গবেষণার বিষয়।
যখন আমাদের মুসলিম সমাজের মেয়েরা এত বেশী স্বাধীন ছিল না। বেঁচে থাকার মানে যখন তাদের ছিল শুধু মাত্র বিদ্যা চর্চা আর খুন্তি নাড়া দিয়ে শশুরবাড়িতে পৌছানো,তখন সমাজ ছিল আশাতিরিক্ত সুখি এবং সমৃদ্ধ।
যুগের হাওয়ার বাণে ভেসে গেল সেই মেয়েদের খোলস। পাল্টে গেল তাদের জীবনবিধি এবং আচরণ। এখন তাদের কারণে শুরু হয়েছে যত সব ফিতনা আর জাহেলী মার্কা কাজ-কারবার।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন তা নিয়ে এখন আর আমার মনে কোন সন্দেহ নেই। তাঁরা মেয়েদের স্বাধীনতার স্বত্তাকে সম্পূর্ণরূপে বাবা-মায়ের হাতে রাখা শ্রেয় মনে করতেন। আজ বুঝছি,তাদের এই ব্যবস্থার মত যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা এখন আর আমেরিকা-রাশিয়ার মত প্রেসিডেন্টরাও করতে পারবেন না।
যখন মেয়েরা পরাধীনভাবে বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপরে সব কিছু ছেড়ে দিত,তখন আমাদের মুসলিম সমাজের অনেক বিখ্যাত মনীষী এবং মহিয়সীগণ মেয়েদের এই পরাধীনতার খোলসটাকে দুঃখের সমুদ্র মনে করে আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন। যা ছিল মারাত্নক ভুল।
তাঁরা মেয়েদের দয়া করে এ জগৎ সংসারের হাল তাদের ঘাড়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। ফল এখন আমরা সবাই দেখছি।
আগের মত আর কারো হায়া নেই। সব,সব্বাই বেহায়া,বেশরম,বেলাজা,বেত্তমিজ মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যা বাদে।
তাদের অসামাজিক বলেন আর বেসামাজিক বলেন সমস্ত কাজ-কারবার এখন প্রতি পদে পুরুষকে টেক্কা দিয়ে হচ্ছে। সেই দিন আর বেশী দেরী নেই,যেদিন রাস্তা –ঘাটে কুকুর বিড়ালের মত জ্বিনা করবে নর-নারীরা।
আগে প্রায় টিভিতে কিংবা সংবাদে খবর দেখা যেত অমুক মেয়ে ধর্ষণ হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে তা আশাতিত হারে কমে গেছে। কারণ সহজ,মেয়েরা পুরুষের মত কামুকে জীবন শুরু করেছে। তারা বিয়ের আগে হানিমুন করছে।
আর গত বছর দুই ধরে স্বয়ং মুসলিম সমাজে শুরু হয়েছে পুরুষ ধর্ষণ!
আশ্চর্য হলেও সতি,সেদিন পাকিস্তানে তিন শিল্পপতির মেয়ে এক অসহায় অল্পবয়স্ক বাচ্চা ছেলেকে ধরে আনে। তারপর তিন বান্ধবী মিলে সারারাত ছেলেটির সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় খেলায় নিমজ্জিত হয়। ছেলেটি প্রথমে রাজী হয়নি,কিন্তু তাকে জোর করে ধর্ষণ করে সেই কাজ করার জন্য বাধ্য করা হয়। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ছেলেটির যৌনাঙ্গ ফুলে ফেঁটে রক্ত বেড়িয়েছে এবং এই মূহুর্তে সে একটি হাসপাতালে চিকিৎসারত আছে।
আমরা অনেকে দিন বদলের গল্প শুনি। এই কি দিন বদল,এই কি পৃথিবীর বদলে যাওয়া?
সে প্রশ্ন পরেও করা যাবে। এখন পাকিস্তান থেকে ইন্ডিয়া এবং আমাদের দেশে আল্লাহ না করুন এই ধরণের ঘটনা না জানি ঘটে যায়!!
আমাদের বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েদের প্রতি আরো বেশী সাবধান থাকবেন। ম্যাচিউড হলেও প্রয়োজন ছাড়া তাদের বাইরে বেরোতে দিবেন না।
কারণ একটি মেয়ে আরেকটি মেয়ের প্ররোচনায় পরে নষ্ট হয়। বাবা-মা ও ভাই-বোনেরা সাবধান।

জাতি আজ কলঙ্ক যুক্ত!

আমাদের দেশের অধিকাংশ লেখক,সাংবাদিক,পুলিশ এবং নেতাদের একটা বদ অভ্যাস আছে। তাঁরা নিজের খেয়ে পরের মহিষ তাঁড়াতে কিংবা ছুরি হাতে দন্ডায়মান জল্লাদের চামচা হতে ভীষন পছন্দ করেন।
এর কারণ স্বার্থ কিংবা প্রাণ বাঁচাতে যে কারণেই হোক না কেন,তাঁদের উদ্দেশ্য যে অত্যন্ত মহৎ তা নিয়ে কোন সংশয় নেই।
কিন্তু আমাদের দেশে একটা একটা প্রবাদ আছে- চোরের দশ দিন,তো গৃহস্থের একদিন।
এ কথাটা হয়তো তাঁরা ভুলে গেছেন। কাজেই তাঁরা ধরে নেন যে এই অবস্থাই ছিল,এই অবস্থাই আছে এবং এই অবস্থাই থাকবে।
তাঁদের এহেন নির্বুদ্ধিযুক্ত এসব কাজ-কারবার দেখে আমার হাসিও আসে,আবার রাগও হয় প্রচন্ড।
দেশের মানুষ নিশ্চয়ই রাজনীতির চামচা নয়,বরং রাজনীতি দেশের মানুষের উপর নির্ভরশীল। এ কথার পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী প্রমাণ আমাদের চোখে-মুখের সামনেই ভাসছে। তাই এ নিয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে উল্টা-পাল্টা লিখে আপনাদের কারো সময় নষ্ট করতে চাই না।
আসল কথা হল গিয়ে যে সমস্ত মানুষ রাজনীতি করছে তাদের আচার-ব্যবহার নিয়ে। একটা সময় আমার মনে হত দেশ থেকে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি যদি সমূলে ধ্বংস করা হয়, তবেই বুঝি বাংলাদেশ হতে সকল প্রকার রাজনৈতিক অস্থিরতা,অশান্তি এবং দুর্নীতির সুখময় সমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি,দল ধ্বংস করা মানে দেশকে ধ্বংসের হাতে ঠেলে দেয়া। কারণ নতুন যে দল আসবে তারা কখনো দেশ চালায় নি বলে বিষয়টি তাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন বলে মনে হবে। তাই কোন দল ধ্বংস নয়,বরং দলের নেতা-কর্মীদের সৎ মানষিকতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সম্ভব।
যাই হোক,অনেক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে ফেললাম।
তো আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু শ্রেণীর মানুষের আচার-ব্যবহারও পাল্টে যায়। অনেকখানি ঋতু পরিবর্তনের মতই ব্যাপার-স্যাপার!
তাদের সংখ্যা যেমন অসংখ্য,তেমনই তাদের সমর্থনকারীদের সংখ্যাও অগণিত। কারণ আমি যদি কারো প্রশংসা করি,তাহলে তো সে আমাকে সাপোর্ট করবেই।
এই সমস্ত মানুষ,যারা দলের কর্মী না হয়েও দলের পক্ষে চামচামী করে তাদের মুখের মাপকাঠি সহসা বোঝা যায় না। যখন যেই দল ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের প্রশংসা করতে করতে তাদের নাভিতে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। নেত্রী তখন হয়তো সাদর সম্ভাসন ও প্রশংসা বিগলিত কন্ঠে তার শ্লোকবাণী জ্ঞাপন করেন নিজ লোক সমক্ষে।
এই চামচারা টেলিভিষণে দেয় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর কিংবা নেতা-এমপির উদ্দেশ্যে সম্মানসূচক ছড়া এবং প্রশংসা।
রেডিওতে দেয় তাদের বিশ্বনিন্দিত কিন্তু বাঙ্গালী কতৃক প্রশংসিত শুভেচ্ছা বাণী!
আর পত্র-পত্রিকায় লিখে লেখকের চেয়ে সম্পাদকের কালি আগে ফুরিয়ে যায় ক্ষমতায় থাকা দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর তেল দিতে দিতে।
এহেন চামচে ভরা দেশের লেখক,সাংবাদিক,পুলিশ এবং নেতাদের মত লোকজনেরা। তারা বিএনপির আমলে ধানের গোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল,আর এখন ব্যস্ত আওয়ামী লীগের ত্রানের নৌকা নিয়ে। তাদের ব্যস্ততা কোন দলের বেলায়ই শেষ হয় না।
এই যেমন সর্বশেষ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হল। তারপর দেখতে পেলাম সেই সব চামচাদের। তারা লোকসমাজে,মিডিয়ায় এবং সংবাদপত্রে সমানভাবে বন্দনা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অমরত্বের দুর্লভ নির্মম কাহিণী।
তখন মিছে তাদের চোখের জল দেখে ঘৃণায় রিরি করেছে আমার মন। মিছে এই সং সাজার পিছনের কারণ হল নেত্রীকে খুশী করা।
তাদের একেকজনের সাহিত্যের পাতা বাংলা একাডেমিতে স্থান পেয়েছে বছরের সেরা প্রবন্ধ হিসেবে। অথচ আমার জানামতে বঙ্গবন্ধু ধোয়া তুলসী পাতা জাতীয় কিছু নন। যাক,মৃত মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করতে নেই। তবে শেখ হাসিনা যে দুটি কথা বলেছেন তা আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে।
এক,”কোন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়,একজন সাধারণ কন্যা হিসেবে পিতার সোহাগ হতে বঞ্চিতকারী খুনীদের শাস্তির প্রত্যাশা করেছি আমি।”
দুই,”আওয়ামী লীগে কোন দল পরিবর্তনকারীদের স্থান হবে না।”
দুই নম্বর পয়েন্টটি আমার পূর্বের সমস্ত কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট কিনা তা ভেবে দেখতে সকলের প্রতি অনুরোধ রইল।
আমরা জানি,বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীদের বিচার হয়েছে। এখন এটা ঠিক যে যারা হত্যা করেছেন তারা সকলেই চরম শাস্তির যোগ্য। কিন্তু পৃথিবীতে কেউ যত পাপই করুক,কোন মানুষের কি পাপের দরুণ মৃত্যুকে বরণ করার পরেও জুতার মার খাওয়ার প্রয়োজন আছে?
ঠিক সে কাজটি হয়েছে আসামীদের মৃত্যুদন্ডের পর। এরপর আবার সেই সব সাংবাদিক,লেখক,পুলিশ আর নেতাদের নানা শ্রেণীবিভাগ (যারা চামচাদের অন্তর্গত) দাবি করছে যে জাতি আজ কলঙ্ক মুক্ত।
কিন্তু আমি দিব্য দৃষ্টিতে বলুন আর আসল দৃষ্টিতেই বলুন দেখতে পাচ্ছি যে জাতি আজ থেকে কলঙ্ক যুক্ত হ্ল।
কারণ রাজনৈতিক অপরাধ শুধু বাংলাদেশে নয়,পৃথিবীর আরো অনেক দেশেই দেদার হচ্ছে। তাই বলে শাস্তি প্রদানপূর্বক মৃত্যুর পর তাদের কবরে পৌছার আগে পুনরায় জুতা মেরে গরু দান করার মত দৃষ্টান্ত মনে হয় একেবারেই বিরল!!
এত সব ঘটনা নিয়েই আমরা অনেক ব্যস্ত আছি,তাই চামচারা যা বলে তাতেই আমাদের হৃদয়ক্ষরণ শুরু হয়,জানিনা কবে এই অবস্থা বন্ধ হয়ে আমাদের নেত্রীদের চোখের তারা খুলবে।

আন্তর্জাতিক পুরুষ নির্যাতন দিবস-২০১০!

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা শুধু মাত্র অসামাজিকই নয়,বরং সমাজের কিছু বিকৃতিপূর্ণ কুরুচি মার্কা মানুষের অস্থির পরিকল্পনা। তাদের জীবনে এ সমস্ত অপ্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান কিংবা সেমিনার ছাড়া আর কিছুই বোধহয় করার নেই।
নারীদের এমনিতেই ইসলাম প্রয়োজনীয় অনুপাতে অধিকার এবং ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে। তাদের জন্য আবার নতুন করে দিবস পালন করা অথবা ঘটা করে তাদের নিয়ে অধিকারের নামে ফ্যাচফ্যাচ করার কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না। এ সমস্ত কিছুকে ভন্ডামী-পাগলামী ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই। নারীদের অধিকার এবং ক্ষমতা যে কতখানি বিস্তৃত হয়েছে তা আমরা মুক্ত বিশ্বের দিকে তাকালেই বুঝতে পারব।
উদাহরণস্বরুপঃ আজকাল টিভি মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপস্থাপনাযোগ্য অনুষ্ঠান,ফ্যাশন,শোরুম কিংবা বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরী নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদাই নারীর জয়-জয়কার।
এ শুধু যে হলিউড-বলিউডেই ঘটছে তা নয়,বরং বাংলাদেশে তাকালেও এ দৃশ্য এখন অহরহ নজরে পড়বে। দেশের পত্র-পত্রিকাগুলো ফলাও করে নারীদের হাতে যাতে পুরুষের কতৃত্ব চলে যায় সে ব্যবস্থাও করছে। তারা নারীর অধিকারের নামে এমন সব দাবী করছে এবং পুরুষদের ব্যাক্তিত্ব তথা পুরুষত্ব পর্যন্ত পত্রিকাগুলো নারীদের অধিকারের সাথে ভুনা খিচুড়ির মত মিশিয়ে ফেলছে।
একটু জ্ঞানী এবং ভাবুক প্রকৃতির লোকেরা মনের জানালাটা খুলে ফেললেই দেখতে পাবেন নারীর দৌরাত্ব কতদূর পর্যন্ত যেয়ে ঠেকেছে।
নিচ থেকেই শুরু করি- এখন এলাকার অলিগলির মুদি দোকানগুলোতে কাস্টমার বেশী হওয়ার জন্য নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। এ তেমন নতুন ঘটনা নয়,অন্তত ঢাকাবাসীদের জন্য।
বিভিন্ন ভোজ্য পণ্যের কোম্পানীগুলো (যেমন-ফ্রেশ,প্রাণ,হারপিক,অলিম্পিক,আল-আমিন ইত্যাদি) তাদের পণ্যের সাথে দোকানে দোকানে পুরুষ সাপ্লাইয়ারদের পরিবর্তে অল্প বয়সী নারীদের পাঠায়।
বাসা-বাড়িতে যে সমস্ত সরকারী কাজের জন্য মানুষ পাঠানো হয় তার অধিকাংশ নারীরাই হয়ে থাকে।
বিভিন্ন এনজিও সরকারী কিংবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা,সেমিনার সার্ভিস,গ্রামীণ প্রজেক্ট ইত্যাদি সমস্ত কাজে পুরুষের চেয়ে নারীদের গুরুত্ব দেয়।
বিভিন্ন ধান্দা মার্কা প্রতিষ্ঠান যথা- ডেসটিনি-২০০০লিঃ,নিউ ওয়ে,ই-লিঙ্ক,পার্ট টাইম জবের নিয়োগ প্রভৃতি সমস্ত কাজে নারী ছাড়া কোম্পানীগুলো একেবারে বাচ্চার মত অসহায়।
কারণ পুরুষরা কাউকে যদি চাপাবাজি করে কোন কিছু করাতে চায়,তাহলে তা কেউ শুনেনা। এমনকি নারীরাও না।
কিন্তু নারীরা সহজেই মিষ্টি কথা দিয়ে নিজের সমগোত্রীয় সহ পুরুষদেরকেও এসমস্ত ভুংচিভাংচি বুঝিয়ে কাজ আদায় করিয়ে নিতে পারে।
তাছাড়া এই মূহুর্তে আমাদের দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী আছেন। সুতরাং তিনি থাকার পরও যদি নারী দিবস পালন করে শোক প্রচারের মত করে নারীদের অধিকার আদায়ের জোর নির্মম প্রচেষ্টা চালানো হয়,তাহলে তা নিতান্ত দুঃখের বিষয় বটে।
আমাদের চিন্তা-চেতনায় এমনভাবে নারীরা আটকে গেছে যে আমরা তাদের নির্মমতা দেখেও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করি। এ আমাদের সমাজের পুরুষের মহানুভুবতা ছাড়া কিছুই নয়।
সুতরাং এ সমস্ত বিষয় বোঝার পরও যে সমস্ত পুরুষ নারী দিবসের জন্য বুক চাপড়ে মরে তাদের আত্নার প্রতি শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদন করছি। তাদের মাথায় কিছু আছে কিনা তাতে আমার শুধু দ্বিধাই নয়,বরং ঘোর সন্দেহ আছে।
তাদের উচিত পুরুষদের নিয়ে চিন্তা করা। আজকাল আমাদের সমাজের অবস্থা দেখে হা-হুতাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। কারণ কোন ভদ্র পুরুষও যদি কোন বাড়ি অথবা গাড়ির সামনে কোন প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাহলে সেগুলোর মালিক কিছুক্ষণ পরই ভয়ে বাড়ি-গাড়ির দরজা বন্ধ করে নিজের সম্পদের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেন। ভাবেন এ লোক বুঝি ডাকাত কিংবা চোর।
অথচ কোন নারী দাঁড়িয়ে থাকলে তারা মনে মনে শুরুতেই ভাবেন- “আহারে! ভদ্রমহিলা একাকি এখানে কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছেন। নিশ্চয়ই তাঁর কোন সমস্যা হয়েছে।”
পুরুষদের জন্য আঁতকে উঠার মত খবর আরো আছে। ৭ই মার্চ প্রথম আলো,সমকাল অথবা ইত্তেফাক পত্রিকা (আমার সঠিক মনে নেই) ভয়ঙ্কর একটা খবর বের করেছে। তা হল “নারীদেরও পুরুষের সমান সম্পত্তিতে ভাগ দিতে হবে।”
এখন আপনারাই বলুন এ দাবী কি যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক?
ইসলাম মেয়েদের সম্পদ দেওয়ার জন্য যে সাম্যতা সৃষ্টি করেছে তা খন্ডনের অধিকার কি তারা রাখে?
নারী কোন যুক্তিতে পুরুষের সমান সম্পদ পাবে?
নারীরাতো বিয়ের পর পুরুষের ঘরে চলে যায়। সে যদি যাওয়ার সময় তার নিজের ভাইয়ের সম্পদের অর্ধেক কামড়ে ধরে নিয়ে যায়,তাহলে ওই পুরুষের সম্পদের ভাগ তো অনেক কমে গেল।
একটা জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে,সম্পদ কামাই করতে পুরুষের কষ্ট হয়। তার থেকে বড় অংশ যদি নারীরা নিয়ে যায় তাহলে সেই পুরুষকে জীবনে একটু অতিরিক্ত খাটনি করতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
অথচ ইসলাম বলে নারী যেহেতু বিয়ের পর স্বামীর হেফাজতে চলে যাবে,সেহেতু তার তেমন সম্পদ নেওয়ার দরকার নেই। কারণ তার জন্য স্বামী মহোদয় সব কিছুতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবেন। সেটা সম্পদ হোক,কিংবা সম্মান হোক। স্বামীর অর্ধেকটা নারীরাই পায়। তাই দুই দিক থেকেই নারীরা ভোগ করবে। অথচ পুরুষ মহোদয় ভোগ করবে শুধু মাত্র উত্তরাধিকার থেকে। এ নিশ্চয়ই পুরুষের জন্য সুখকর হবে না।
এ অবস্থা দেখেও কি ওই সমস্ত পুরুষদের হুশ হয় না।
সমস্যা আরেকটা আছে। সেটা হল পুরুষের কোন প্রতিভা থাকলে টাকার অভাবে তার বিকাশ ঘটেনা মিডিয়া অথবা বিশ্বজগতে।
অন্যদিকে নারীর কোন প্রতিভা থাকলে তা বিকশিত হতে মোটেও দেরী হয়না। কারণ নারীর অনেক কিছু আছে,যেটা পুরুষের নেই। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। পুরুষ দিবস এখন থেকে পালিত হবে প্রতি বছর ৮ই মার্চ,নারী দিবসের প্রতিবাদ জানিয়ে তার সাথে পাল্লা দিয়ে। কারণ নারীদের জন্য এখন পুরুষ অনেক কিছু করে ফেলেছে।
এখন সময় এসেছে নিজেদের জন্য কিছু করার।


মোঃ আরাফাত হোসেন
মিরপুর-১,ঢাকা-১২১৬।

ওরা আওয়ামীলীগ করে না,তাই কিছু বললেই মারে!

এতদিন ছোট ছিলাম,তাই রাজনীতির ক্ষমতা কি জিনিস তা বুঝতাম না। সেদিনের ঘটনার পর সব বুঝে গেছি।
সেদিন আমার এক বন্ধুসহ গিয়েছিলাম পাইকপাড়ার রুনু আক্তার কমিশনারের বাড়িতে। একটা চারিত্রিক সনদ দরকার ছিল আমার বন্ধুর।
আমরা যেয়ে দেখি বেশ কিছু মানুষ বসে আছে সেখানে। তারা সবাই কমিশনারের একটি সাইন নেওয়ার জন্য বসে আছে।
কিন্তু কমিশনারের কি আর ক্ষমতা,তার চেয়ে বেশী ক্ষমতা বোধহয় যাকে দায়িত্ব দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে সেই তৃতীয় শ্রেণীর লোকটার। যার কাজ শুধু লোকের কাগজ-পত্র কিংবা জরুরী সনদ কমিশনারের কাছে পৌছে দেওয়া।
সে গরীব এবং অশিক্ষিত লোকদের দিকে এমনভাবে তাকাল যেন তারা মানুষ নয়। তাদের সনদ দিতে অযথাই দেরী করিয়ে রাখল। আমি নিজেও অস্থিরভাবে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু লোকটা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার পরিচিত যারা আছে তাদের সময় দিতে লাগল। একজন মহিলা এল এ সময়,তাকে দেখেই সেই কমিশনারের নিয়োগ করা লোকটা লাফিয়ে উঠে সালাম জানাল।
কি খাবেন সেই মহিলা কিংবা মহিলার কি লাগবে তার জন্য লোকটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। কিন্তু মহিলাকে দেখে মনে হল সে ওই লোকটাকে মোটেও পাত্তা দেয় না।
সবাই যেখানে অনুরোধ করে নিজের কাজ আদায় করে নিচ্ছে সেখানে সেই মহিলা অনুরোধ নয় আদেশ করল। লোকটা অনুগত কুকুরের মত মহিলার সেই কাজ করে দিল।
পরে শুনলাম মহিলা নাকি কমিশনারের খুব কাছের মানুষ।
মহিলা চলে যাওয়ার পর লোকটা আমার দিকে তাকাল। কি লাগবে জিজ্ঞ্যেস করতে বললাম যে চারিত্রিক সনদ। সে ঠিকানা জানতে চাইলে তাকে বললাম,
-৩৭/২,সি/১,সালেমউদ্দিন মার্কেট,মিরপুর-১,ঢাকা-১২১৬।
শুনে লোকটা ধমকে উঠল।
-ধুরো! সালেমউদ্দিন মার্কেট কি কোন জায়গার নাম হল?
-জ্বি আঙ্কেল,ওই দশতলা গার্মেন্টসের সামনের বাড়িটাই।
জবাব দিলাম আমি।
-যাও ভাগো এহানতে। (বিরক্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠল) আমি কই জায়গার নাম কি,আর তুমি কও গার্মেন্টসের সামনে। আমি কি তোমারে গার্মেন্টসের কথা জিজ্ঞাইছি? জায়গার নাম কইতে পার না আবার আইছ চারিত্রিক সনদ নিতে।
অপমানের সুরে বলে উঠল লোকটা। আমি বললাম,
-দেখুন আঙ্কেল,আমরা ছোট মানুষ,আপনারা মুরুব্বী,আপনারা যদি আমাদের শিখিয়ে না দেন,তাহলে আমরা কি করে জানব?
-চোপ, এত কথা বল ক্যান? এহন কইলাম চারিত্রিক সনদ আটকাইয়া রাখমু। এই পুরাডাইতো সালেমউদ্দিন মার্কেট। এহন কি আমি কমিশনার আপার বাড়ি সালেমউদ্দিন মার্কেটে পড়ছে কমু।
আমি বলতে নিলাম ওই ভাগের পুরোটাই তো শাহ আলীবাগে পড়েছে,তাহলে তো অন্য কোন জায়গাকেও শাহ আলীবাগ বলা যায়। কিন্তু আমি আর জবাব দিলাম না। ওদের কাছে আমি,আমরা সবাই জিম্মি। মজার ব্যপার হল ক্ষমতায় নেই ওরা,কারণ ওরা বিএনপি।
অথচ ক্ষমতায় না থেকেও যে ধরণের গায়ে পড়ে চামারের আচরণ করে এরা তা দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই!
এখন আওয়ামীলীগ সরকার নয়,তবুও ওদের কি দাপট!
এক লোক এল লুঙ্গি পড়া। যাকে দেখেই বোঝা যায় সে খুব গরীব ঘরের লোক।
কমিশনারের সেই লোকটা শুধু শুধু সেই গরীব লোকটাকে বিভিন্ন বকা মিশ্রিত উপদেশ ঝাড়তে লাগল।
অথচ কি আশ্চর্য! এই সব লোকের ভোট এবং পরিশ্রমের ফসল খেয়ে আজ তারা টাকার পাহাড় বানিয়েছে। সে কথা মনে হয় কস্মিনকালেও স্বীকার করতে চাইবে না তারা।

আরেকটা কথা মনে পড়ছে আমার। এ কথা হল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির পাগলামী নিয়ে।
একদিকে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসেই আমাদের এলাকার যত বিএনপির স্বল্প ক্ষমতার লোকজন ছিল তাদের ইচ্ছে মত মেরে চার বছরের জ্বালাতনের ঝাল তুলেছে। রাম দা,বটি এমন কি রিভলবার নিয়ে পর্যন্ত আওয়ামীলীগের কর্মীরা বিএনপির কর্মীদের মারতে তেড়ে গেছে।
নেতাদের প্রশ্ন করা হলে তারা জবাব দেন যে এটা আওয়ামীলীগের ক্ষতি সাধন করতে চাওয়া কিছু অসাধু দুমুখো মানুষের কার্যক্রম। কখনোই তাঁরা নিজের ঘাড়ে দোষটা স্বীকার করে নেন না।
এরপর এল দেশের বড় বড় যত স্থাপত্য আছে সেগুলো নিয়ে লাফালাফি।
প্রধানমন্ত্রী নিজে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম পরিবর্তন করলেন,লোকে যাতে কিছু বলতে না পারে সে জন্য শেখ মুজিবের নামে না দিয়ে দিলেন সুফি সাধকদের নামে।
এছাড়া আমাদের মিরপুর সনি হলের সামনে একটা জিয়ার প্রতিকৃতি সম্বলিত চত্বর ছিল। সেটার নাম পরিবর্তন করে এখন স্বাধীনতার চত্বর করা হয়েছে। সন্দেহ নেই লোকে ভাববে,ভালই তো। এখন সুন্দর হয়েছে।
মূলত এসব করা হয়েছে যাতে কোন কিছুতে বিএনপির নাম না থাকে।
কিন্তু একটা কথা হল যে নামে কোন কিছু আসে যায় না। বরং সেই নামের স্বার্থকতার চেয়ে তার যে সেবার কার্যক্রম তা থেকে মানুষ কতটুকু উপকৃত হচ্ছে কিংবা কি রকম সেবা পাচ্ছে,তা হল মূল কথা।


এই গেল আওয়ামীলীগের কথা। এবার বিএনপির কথায় আসি। ৭ই মার্চ তারেক রহমান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাই এখন থেকে ৭ই মার্চ তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিএনপির জন্য।
এ ব্যপারে আমি বলতে চাই খুব সামান্য কথা। ধরুণ, এখন আমার অনেক টাকা এবং ক্ষমতা আছে। ঘুষের টাকা খেয়ে আমার ডায়রিয়া,আর তার সাথে অনেক পাতলা পায়খানা হল। তো সেই পাতলা পায়খানা ৭ই মার্চ হঠাৎ করে আল্লাহর মর্জিতে ভাল হয়ে গেল।
তাহলে তো আমি প্রতিবছর ৭ই মার্চ এ আরাফাত হোসেনের ডায়রিয়া এবং পাতলা পায়খানা মুক্তি দিবস হিসেবে পালন করতে পারি?
কি বলেন!
আর শিবিরের কথা নাই বললাম। তারা যা বলে সব ইসলামের আলোকে বলে থাকে, এ কথাটি আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু তাদের কাছে কোন দোষ ধরা পড়লে যাকে তাকে ধরে গলার-পায়ের রগ কেটে ফেলা এসব নিশ্চয়ই ইসলামে আদেশ করেনি।
সুতরাং যারা ইসলামের গুণগান করে আবার সেই ইসলামকেই পায়ের নিচে পিষে ধরে,তাদের কথা জনগণের শুনার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
আমাদের দেশের হচ্ছে এই অবস্থা। কোথায় কোন সমস্যা রাজনৈতিক দলগুলো একত্রে সমাধান করবে, তা না করে বরং সেই সমস্যা থেকে আরো হাজারটা সমস্যা সৃষ্টি করবে। তাও দলীয় কোন্দল নিয়ে। একদিন যে মরে গিয়ে এই পৃথিবীর মাটির নিচে চলে যেতে হবে তা এরা বুঝে বুঝতে চায় না। এ কারণে দেশের ততটা ডেভেলপ হচ্ছে না।

পাগল জরিপ-২০১০ ইন ঢাকা সিটি!

আগে পাগল বলতে বুঝাত পুরুষ প্রজাতিকে, আর এখন তাদের বলা হয় পাগলা। আর মেয়েদের খ্যাতাবটা এখনো অপরিবর্তিত-ই আছে।
পাগলী!
সুতরাং পাগল হল এখন উভচর শব্দ,কিংবা উভয়লিঙ্গ শব্দ। যেমন-মানুষ একটি উভয়লিঙ্গ শব্দ।
মোটামুটি এই হল পাগল নামের পূর্ণ সমাচার।
এবার পাগলের সঙ্গায় আসি। যাদের মাথায় গন্ডগোল আছে,এক কথায় তারাই পাগল।
কিংবা যারা কল্পনার সাথে বাস্তবের যে পার্থক্য সেটা ধরতে পারে না,তাদের পাগল বলে।
অতীতে পাগল ছিল তারাই,যারা বনে-বাদে,ক্ষেত-ক্ষামারে, কিংবা হতে পারে বাজারে লোকের সামনে বিনা দ্বিধায় কাপড়-চোপড় খুলে দ্বিগম্বর হয়ে যেত, আর একা একা দেশের এমন সব কথা বলত যেগুলো বাস্তবায়িত হলে এক নিমিষে বাংলাদেশ আমেরিকার মত না হলেও ইন্ডিয়ার মত উন্নয়নশীল হয়ে যেত।
কালের বিবর্তনে পাগলদের প্রজাতির পরিবর্তন ঘটে। আস্তে আস্তে সেই পাগল লোকের গন্ডগোল সভ্য সমাজের মানুষের মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
সভ্য মানুষগুলো এই বিজ্ঞানের আধুনিক যুগে এসে পুরোপুরি পাগলের খাতায় নাম লিখিয়েছে। তার প্রমাণ রাস্তাঘাটে ঘুরলেই দেখা যায়।
আমার এ প্রবন্ধে আমি ঢাকা শহরের বিশেষ কিছু জায়গার পাগলদের বর্ণনা দিব।

গুলিস্তানঃ
ঢাকা শহরের পাগলদের প্রধান আস্তানার মধ্যে গুলিস্তান একটি। এখানে সর্ব কিসিমের পাগল বাস করে। এই এলাকাটি ঢাকা শহরের শুরুতে হওয়ার কারণে এখানে উঁচু-নিচু উভয় স্তরের পাগলদের দেখতে পাওয়া যায়। নিচু স্তরের পুরুষ পাগলারা সাধারণত রাস্তাঘাটে ছিনতাই,চুরি কিংবা মারামারি করে। মাঝে মাঝে তারা গ্রুপ বেঁধে ডু অর ডাই মিশনে যায়। এদের লাইফে ভয় বলে কিছু নেই। এরা উঁচু স্তরের পাগলাদের শ্রদ্ধা করে।
উঁচু স্তরের পাগলারা নিচু স্তরের পাগলাদের সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কাজ করায়। উঁচু স্তরের পাগলারা বড় বড় ধান্দা করে। যেমন- এলাকার উন্নয়নের নামে সরকারী টাকা আত্নসাৎ।
গুলিস্তান যেহেতু পুরোন ঢাকার পাশাপাশি,তাই এখানে অনেক মহিলা পাগলীও দেখতে পাওয়া যায়। এ সমস্ত পাগলীরা রাতের অন্ধকারে পাগলাদের সাথে রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। মাঝে পুলিশ নামের পাগলারা হুমতাম করে ধমক দেয়,কিন্তু তারাও পাগলীদের নিয়ে সুখ চরিতার্থ করে।
এছাড়া কিছু উঁচু স্তরের পাগলী আছে যারা পাগলাদের সাথে টাউটগিরি করে। এই সমস্ত পাগলীরা অনেক প্রতিভাশীল। এদের বুদ্ধির সাথে পাগলারা সহজে পেরে উঠে না।

গুলশান+ধানমন্ডিঃ
এ দুটি এলাকা এবং মতিঝিল,উত্তরা,বনানী প্রভৃতি প্রায় একই সিস্টেমের আওতায় পড়েছে। এখানের বেশীরভাগ পাগলারা ভিআইপি। তারা দিনের বেলা দামী গাড়িতে চড়ে মোটা ভূড়ি নিয়ে চাকরী নামের অকাজ করতে বের হয়ে পুরো ঢাকা শহরকে নিজেদের দেহ দ্বারা আচ্ছাদিত করে রাখে।
এদের পাগলামো একটু বৈচিত্র ধরণের। এরা সাধারণত যাত্রা পথে গাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ করে এসির বাতাস খায়। মাঝে মাঝে যখন দুই-চারটা প্রকৃতির ছেলে (অসহায় বাপ-মা হীন) কিংবা জীবন যুদ্ধে পরাজীত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা তাদের কাছে হাত পাততে যায়,তখন এই পাগলারা মুখ ঝামটা মারে। অনেকে আবার হেডে সেন্টিমেন্টাল প্রবলেমের কারণে অসহায় শিশুদের ধরে মারে। তবে আমি এখন পর্যন্ত কোন বয়স্ক ফকিরকে মারতে দেখিনি।
এইসব এলাকার পাগলীরা ভয়ঙ্কর রকমের তারছিড়া। এরা রাস্তাঘাটে,শপিং মলে,ফুড শপে কিংবা ডিজে পার্টিতে টাইট জামা পড়ে নিজের দেহের পাহাড় উন্মোচন করে পুরুষের ন্যায় জিন্টসের প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এদের সাথে অল্প বয়স্ক ছেলেরা কিংবা পাগলারা সহজে পেরে উঠে না। এরা অতি আধুনিকা পাগলী।
এরা চায় পুরো দেহ উন্মুক্ত করে দেখাতে,পাছে লোকে ভাবে এরা পুরোপুরি দ্বিগম্বর পাগলী হয়ে গেছে!
এই ভয়ে সেটা পারে না। তাই পাগলাদের চোখের সামনে নিজের দেহকে ঘরের শোকেসের মত সাজিয়ে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় চলাফেরা করে। ডিজে পার্টিতে কোন পাগলা যদি এদেরকে কিছু বলে তাহলেই সর্বনাশ!
সেই হাফ পাগলাকে টোটালী ফুল পাগলা করে ছেড়ে দেবে এইসব ভয়ঙ্কর পাগলীরা।
তবে এদের মন খুব নরম। এরা যাকে ভালবাসে তার জন্য নিজের দেহের সম্পদ পুরোটাই দিয়ে দেয়। ভবিষ্যতের স্বামীর কথা চিন্তা করে না।
এদের চলাফেরার স্টাইল অদ্ভুত। এরা কখনো পুরুষের বেশে সেজে থাকে,কখনো বা গ্রাম বাংলার বধূর মত শাড়ি পড়ে। তবে তা নিতান্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া পড়ে না বললেই চলে।
এই সমস্ত পাগলীরা নিজেদের দেহকে ছিড়ে ফুড়ে রাখতেও খুব ভালবাসে। যেমন- তারা প্রায়ই নাক ফুরানোর বদলে ভ্রু ফুরায়। কিংবা নিম্নাঙ্গে (যৌনাঙ্গ) আংটি পড়ে। এতে মনে হয় পাগলীদের মেডিটেশন বাড়ে!
এ ব্যপারে তারাই ভাল বলতে পারবে,যদি মাথায় গন্ডগোলের কারণে আমাকে কামড় দিতে না আসে তাহলেই হয়!

মিরপুরঃ
মিরপুর ঢাকা শহরের পাগলদের বিশেষ করে পাগলাদের অভয়াশ্রম। এর সবচেয়ে বড় অংশের পাগল থাকে মাজার এলাকা থেকে শুরু করে মিরপুর দশ পর্যন্ত। এর মধ্যে অন্তর্গত হয়েছে- পানির ট্যাঙ্কি,টোলারবাগ,পাইকপাড়া,পীরের বাগ, পুকুরপার ইত্যাদি প্রায় সবগুলো এরিয়া।
এখানকার পাগলদের অল্পতে মাথা গরম হয়ে যায়। তারা পথ শিশুদের ধরে ধরে কারণে-অকারণে মারে। এটা সম্ভবত তাদের একটা নেশা। এছাড়া মিরপুর এক নাম্বারের গ্রামীন ফোনের কাস্টমার কেয়ারের সামনে সন্ধ্যাকালীন সময়ে কিছু নিশিকন্যা দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সাথে পুলিশ নামের পাগলা ট্রাফিকের অনেক ঘর্ষণ-সংঘর্ষ ঘটে। (মনের সংঘর্ষ)
মাঝে মাঝে এই সব নিশিকন্যাদের ধরে ধরে মাথা বেশী গরম পাগলারা আঘাত করে। নিশিকন্যাদের আঘাত করলে কেউ কিছু বলেনা তো তাই।
মাজার অংশের পরিবেশ আবার ভিন্ন। সেখানে হুজুর নামের কবিরাজ মার্কা পাগলারা জোকের তেল,খুজলির মলম এবং লিঙ্গের মালিশ নিয়ে বসে থাকে।
বেকুব সাধারন পাবলিকরা এই সব লেকচার শুনে আর ভাবে তাদের দাম্পত্য জীবন রাস্তার মাঝেই সুখি হয়ে যাবে। এই সব পাবলিকদের মাঝে কিছু আছে মাজারের পাগলা। এরা মাজারের বিশাল বটগাছকে প্রভু মনে করে সেজদা করে,তাতে ধুপ জ্বালায়।
ইসলাম ধর্মের অপমান আরকি।
মাজারের পীর কোম্পানীগুলো তো আরেক ফটকা। তারা ধ্যান করে গাঁজা খেয়ে। একে তারা বলে সিদ্ধি। প্রচলিত আছে- সিদ্ধি খাইলে বুদ্ধি বাড়ে।
এই এলাকার পাগলীদের প্রধান দুষ্ট স্বভাব হল গাধা কিসিমের পাগলা ছেলেদের ধরে ডেটিং-এ যাওয়ার নাম করে পকেট থেকে পৈত্রিক সম্পদ যতদূর সম্ভব কাচিয়ে বের করা। এ ক্ষেত্রে যার যতদূর ইমপ্রেস করার ক্ষমতা সে তত বেশী কামিয়ে নিচ্ছে।
তবে এখানকার কিছু পাগলা আছে যারা অনেক ক্ষমতাশালী। এরা নিজেদের ক্ষমতার বলে সাধারণ লোকদের উপর অনেক রকমের অত্যাচার করে,যা বাইরের লোক সহজে জানতে পারে না।
এখানকার মানুষেরা এমনিতেই নিষ্ঠুর। তাছাড়া আওয়ামীলীগ এসেছে ক্ষমতায়। কেউ তাদের কিছু বলতে পারবে না।
তাই এই দলের পাগলারা এখন অন্যধরণের একটা ভাবে আছে। কথা বললেই ঢুশ!

বিএনপির পেটে আওয়ামীলীগের বাচ্চা!

স্থানঃ বসন্তের শুভ্র স্পর্শে কাতর নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলীয় দেশ,বাংলাদেশের একটি জনবহুল শহর, সম্ভবত ঢাকা হইবার তীব্র আশঙ্কা করি।
তথাকার সংসদ ভবনে রাতের গোল মিটিং চলিতেছে। উপস্থাপক,বক্তা কিংবা অতিথি বলিতে সর্বদা যে দুই ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ করা যায়,তাহারাই আজ আসিয়াছে। অন্য কোন সেবক,খাদক কিংবা চাটুকারদিগের কেহই নাই।
একজন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ এবং ভাবুক জনাব অমিত(আওয়ামীলীগ),চেহারা বুদ্ধিদীপ্ত এবং মেধার ঝিলিকের ন্যায়।
অপরজন মোটাসোটা,গোলগাল এবং মিষ্টি হাসির অধিকারী, পেশায় এডভোকেট,জনাব নয়ন(বিএনপি)।
আলোচনার শুরুতে প্রথমে চলিল কুরআন পাঠ,অতঃপর নিজের দলের প্রশংসার পূর্বে গলার রগ ফাটাইয়া অপর দলের কুকীর্তির সংক্ষিপ্ত এবং বিস্তারিত বয়ান।

অমিত এবং নয়নঃ দুই বন্ধু, তাহাদের শৈশব বড় মধুময়।
আট আনা লইয়া মার্বেল খেলিতে খেলিতে সারাবেলা পার করা,কিংবা হাটে যাওয়ার নাম করিয়া দুই বন্ধুর নৌকা সমেত নদ ভ্রুমণের কাহিণী হয়ত গাঁও-গেরামের লোকেরা ভুলিতে বসিয়াছে,কিন্তু তাহাদের এ বিষয়ে কোন প্রকার আপত্তি নাই।
গাঁয়ের লোকেরা অমিতকে চিনিত সিঁধেল চোর হিসেবে,আর নয়নকে চিনিত ধান্দাবাজ মিথ্যুক হিসেবে।
এ বিষয়ে নয়নের গুণ বেশী ছিল তাতে সন্দেহের অবকাশ নাই। সে লোকদের ধরিয়া তাতক্ষণিক কার্যক্রম দ্বারা বোকা বানাইয়া তাহাদের উদর তথা পকেট নিঃস্ব করিবার খেলাটি অতি চমৎকারের সহিত রপ্ত করিয়া লইয়াছিল।
যাহাই হোক,অনেক বছর ধরিয়া তাহাদের দেখা নাই। বড় হইবার পর হঠাৎ সেই আশ্চর্য শহরে দুইজন দুইজনকে চিনিয়া ফেলিল।
শহরখানি ধুলাময়, নিস্প্রাণ এবং নিষ্টুরতার কালি ক্রমাগত লেপণ করিতে করিতে ইহাতে কেমন যেন এক বিষাদ কালিমার ছায়া পড়িয়াছে। সেই ছায়া আবার মনুষ্যদের দখল করিয়া লইয়াছে। নতুবা কেহই বলিতে পারিত না যে মনুষ্য কোন প্রকার খারাপ জাত।
পল্টন মাঠে নয়ন হঠাৎ অমিতকে দেখিয়া লাফাইয়া জড়াইয়া ধরিল। খানিকক্ষণ আহ্বলাদিত গলায় একজন আরেকজনের পরিবার এবং সংসারের কথা জিজ্ঞাসিল। তারপর কি সমাচার জিজ্ঞাসা করিবা মাত্র দুইজনেরই ভিমরতী খাইবার অবস্থা হইল।
কারণ কিছুই নহে,অমিত আওয়ামীলীগের নেতা,আর নয়ন বিএনপির মন্ত্রী।
নয়ন বলিল, ওরে,সময় থাকতে তুই আমার কাছে চলে আয়। তুই দেখিস নি গতবার বিএনপি কি বিপুল ভোটে জয়লাভ করল। তোকে দেশ সেবার ভাল একটা পদে দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করে রাখব।
অমিত বলিল, তুই মিছেমিছি এই দলে পড়ে রয়েছিস। তুই আমার কাছে চলে আয়,দেখবি তোর জন্য আমি আমাদের দলের সবচেয়ে বড় নৌকা দিয়ে দিব। তোর টাকা-পয়সার কোন অভাব হবে না।
আর ধূর! বিরক্তি প্রকাশ করিল নয়ন।
এভাবে দলে টানাটানি কতক্ষণ চলিল তাহা বলা মুশকিল। তারপর যখন দুইজনেরই সুবুদ্ধির উদয় হইল যে দরকার হইলে তাহারা জীবনাত্না ত্যাগ করিবে,তবুও কেহই তাহার দল হতে বিন্দুমাত্র নড়িবে না।
তারপর হইতে দুই বন্ধুর এহেন নৈশ সাংসদিক গলা কাটাকাটি চলিতেছে। আজও তাহা যথাসময়ে শুরু হইল।
অমিত সাহেব আসন গ্রহণ করিয়া প্রথমে উপস্থিত বিরোধী দল ও নিজদলের প্রতি সালাম এবং জাতির নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিল(যদিও তিনি বাঁচিয়া নাই)। তারপর শুরু করিল,
-আওয়ামীলীগ সমৃদ্ধি এবং সম্পৃতি বজায় রাখবার জন্য একটি উপযুক্ত দল। কিন্তু, যেদিন হতে বিএনপির ওই জিয়াউর রহমান তাঁর কুটনীতি শুরু করলেন সেদিন হতে দেশটা যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছে।
-মাননীয় স্পীকার, (বাঁধা দিয়ে নয়ন সাহেব বলল) এখানে নিজের কার্যক্রমের বিবরণ না দিয়ে অপর দলকে গালাগালি করা হচ্ছে কেন?
স্পীকার সাহেব হাত তুলে থামিয়ে দিলেন নয়নকে। পুনরায় অমিতের বক্তব্য শুরু হল।
-জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার পর নিজের হাতে ক্ষমতা তুলে নিলেন,তখন অনেক সামরিক কর্তারাই এই অন্যায় আবদার সহ্য করতে পারেন নি। তাঁরা এর বিদ্রোহ শুরু করেন। এতে জিয়াউর রহমান ক্ষেপে যান। এই বিদ্রোহ দমন করতে তিনি ওই সমস্ত সামরিক লোকজন এবং কর্তাদের ক্যান্টনমেন্টের সামনে রাতের আঁধারে ফায়ারিং স্কোয়াডে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এ নৃশংস হত্যা কান্ডের সুষ্টু বিচার পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আনুমানিক শতাধিক লোকদের জিয়াউর রহমান ঐ রাতে হত্যা করেছিলেন।
-মাননীয় স্পীকার,(নয়ন সাহেবের চিৎকার) আমারও কিছু বলার আছে।
অনুমতি মিলায় নয়ন সাহেবও পূর্ণ উদ্যোমে নিজদলের গুণ কীর্তন শুরু করিল,তবে তার আগে আওয়ামীলীগের যাবতীয় গোমড় ফাঁস করিতে কৃপা বোধ করিল না।
-ভাই অমিত,আপনার জানার মধ্যে কিঞ্চিত ভুল আছে। বিএনপি কখনোই এরুপ অসৎকাজ কোনকালেই করার উদ্যেগ নেয় নাই। বিএনপির বিভিন্ন আন্তঃর্জাতিক এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম আজ জাতির নিকট প্রশংসিত। আর আওয়ামীলীগ,সেতো এক মহা চোরের দল। চোর না হলে কেউ এহেন কাজ করতে পারে তা ভাবাই যায় না। ছি ছিহ! শেখ মুজিবের মত মানুষ শেষ পর্যন্ত এই কান্ড করলেন। বুঝলেন,সবই ক্ষমতা আর টাকার লোভ। মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু যোদ্ধা শেখ মুজিবের কথামত কাজ করেনি। পরে এই সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে তিনি মেরেছেন,তা জানলে দেশের লোকতো ছি ছি করবেই। শুধু তাই নয়, মুজিব চেয়েছিলেন তিনি যেন স্বৈরাচার শাসক হতে পারেন। কিন্তু তাঁর এই পাকা ধানের মাচার উপর যারাই মই দিতে গিয়েছে তাদের সবাইকে গনহারে হত্যা করেছেন শেখ মুজিব। এই কথা বাইরের পৃথিবী শুনলে আওয়ামীলীগের মুখ বলে কিছু থাকবে?
-চোপ,হারামজাদা,(গাল দিয়ে উঠে অমিত) তোর বাপ-দাদা সবাই ছিল বিএনপির চামচা,তুইও হয়েছিস একটা খাস চামচ। তাই এইসব ফাঁকা বুলি ছেড়ে কাজ উদ্ধার করতে চাচ্ছিস!
নয়নও কম যায় না। সে বলে উঠল।
-চোপ বদমাইশের বাচ্চা,তোর মত নিজের খেয়ে পরের মহিষ তাড়ানোর লোক আমি না। আমি দেশের খেয়ে দেশের মহিষ তাড়াই।
ব্যাস,কথা আপাতত বন্ধ,তবে হাত চালাচালি শুরু হইয়া গিয়াছে। সামান্য মুখের কথায় একজনের নাক ফাঁটিল,অন্যজনের দাঁত ভাঙিল। কার কোনটা ভাঙিল সেটা বলা নিস্প্রয়োজন। তবে ভাঙিল যে তা ঠিক।
অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমান আর জিয়াউর রহমান স্বর্গ বাসে হাসিতেছেন।
-কি বুঝলে জিয়া? মানুষ আমাদের সত্যিই ভালবাসে তাই না?
-না মুজিব ভাই,এরা মূলত আমাদের মতই। ওইযে বলল না,আমি দেশের খেয়ে দেশের মহিষ তাড়াই।
-তাতে কি,দেখনা চার বছর পর্যন্ত একাধারে আমার জন্মদিন,মৃত্যুদিবস,কাঙালী ভোজ এইসব পালিত হয়।
শেখ মুজিবের সহাস্য উত্তর।
-তা অবশ্য ঠিক,তবে বাকী চার বছরতো আমার ভাষণ দিবস,জন্মদিবস প্রভৃতি নিয়েই লোকে ব্যস্ত থাকে। আপনারটা নিয়ে তাদের ভাবার সময় কোথায়?
জিয়াউর রহমানের এহেন বক্তব্য শ্রবণে শেখ মুজিবর রহমানের অপমাণ বোধ হয়। তিনি জবাব দিলেন।
-তোমার মত যে লোক ফায়ারিং স্কোয়াডে মানুষদের মেরে ফেলে,তার মত খুনীর আবার কিসের দিবস পালন?
-আপনার মত লোক,যে কিনা ক্ষমতা ও টাকার লোভে দেশের নেতাবর্গদের থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধাদের পর্যন্ত হত্যা করে,তার আবার কিসের দিবস পালন করবে লোকে? তাকে তো লোকজন ফুলের বদলে জুতা মারবে!

ব্যস,স্বর্গ এবং পৃথিবীর সমস্ত ক্রীয়া যেন একই সাথে শুরু হইয়া গেল। নিচে অমিত এবং নয়ন দুই নেতাকে লইয়া নাক-মুখ ফাটাফাটিতে ব্যস্ত।
অন্যদিকে দুই নেতাও নিজেদের সম্মান রক্ষা করিতে নিজেরা স্বর্গে খাইবার ফল-ফলাদি একে অপরের গায়ে ছুড়ে মারিতে লাগিলেন।
কথায় আছে, ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে।

নোটঃ এই লেখাটি একটি কাল্পনিক মনের পরিভ্রুমণ মাত্র। তবে ব্যক্তি এবং স্থান কিছুটা যুক্তির দাবী রাখে।
বিঃদ্রঃ একটি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে। নয়ন এবং অমিত দুই ব্যক্তিই সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়াছিল।

বাংলা একাডেমীতে সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলা!

অনেকদিন ধরিয়া বইমেলা শুরু হইয়াছে। যাইব যাইব করিয়া কিছুতেই সময় নির্ধারণ করিতে পারিলাম না আমি। হঠাৎ করিয়া আমাদের পার্শ্ববর্তী বাসায় বসবাসরত এক জোষ্ঠ্যভ্রাতা আমাকে মেলায় যাইবার জন্য তাগিদ দিতে লাগিলেন। অগত্যা তাহার এইরূপ অসামাজিক নম্র চরিত্রের কারণে মেলায় যাইবার উদ্যেগ গ্রহণ করিতে পারিলাম।
গতদিবস সাঁঝের পরমূহুর্তে এশার নামাজের পূর্বকালীন সময়ে আমি ছিলাম বাংলা একাডেমীর বইমেলার মূল প্রাঙ্গনে। তথায় আমি অন্যপ্রকাশ ও সময় প্রকাশনীসহ ব্লগারদের আড্ডার আশেপাশে ঘুরঘুর করিতেছিলাম। কিন্তু যে দু’চারজন ব্লগারদের দর্শন করিলাম,তাহাদের সামনে যাইবার নিমিত্তে আমি যারপর নাই চেষ্টা করিলাম তথাপি কিছুতেই তাহাদের সহিত কথা বলিবার জন্য মন সায় দিল না।
এর কারণ উল্লেখপূর্বক আমি আপনাদের মেলায় চামার এবং জুতার চামড়াযুক্ত কিছু লোকের সন্ত্রাসীসুলভ কর্মকান্ডের সুস্পষ্ট বিবরণ প্রদান করিব।
প্রথমত যে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করিয়া আমার মন খুশীতে ভরিয়া উঠিয়াছিল তাহা হইল অতীতের সমস্ত বইমেলা এবারের মেলার তুলনায় ছাই বৈকি!
কিন্তু মেলার মূল প্রবেশদ্বারে আসিয়া আমি চমকিয়া গেলাম। তথায় চারটি ছোট ছোট ফুলসম ছেলে-মেয়ে মনের আনন্দে খেলিতেছে। জীবন তাহাদের সবে টানিতেছে। পৃথিবীর বৈষ্ণতা তাহাদের বক্ষরেখায় ছায়াপাত করিতে পারে নাই।
খানিকবাদে যেইনা তাহারা মেলার ফটক দিয়া ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করিল,অমনি মেলার দাড়োয়ান সদৃশ ভলান্টিয়ার কর্মীরা তাহাদের ঘাড় পুচকে চন্ডালীর ন্যায় নিচু করিয়া সবেগে চটোপাঘাট করিল পিঠের মধ্যপ্রদেশে।
বাচ্চাগণ ব্যথায় একটুখানি শব্দ করিয়া পরক্ষণে দৌড়াইয়া ভলান্টিয়ার নামের জানোয়ার প্রজাতি হইতে নিজেদের আড়াল করিয়া লইল এবং মুক্তি পাইবার পরমানন্দে বিজয়ী সৈনিকের ন্যায় উল্লাসধ্বনি প্রকাশ করিল।
কেন ভলান্টিয়ার কর্মীদ্বয় বাচ্চাদিগকে প্রহার করিয়াছে শুনিয়া আপনারা হয়তো স্বাভাবিক ভাবিবেন,কিন্তু উহা আমার কাছে ছিল পুরোপুরি জন্তুসুলভ একপ্রকার আচরণের সামিল।
বাচ্চাগণের দোষ তেমন কিছুই নহে,তাহারা রাস্তা-ঘাটের সন্তান। ফাঁক পাইলে চুরি করে,নতুবা ভিক্ষা মাগি খাইতে চায়।
খানিকক্ষণ পরে কি করিয়া যেন বাচ্চাগণ মেলার ভিতরে প্রবেশ করিল। তারপর তাহারা ভিড়ের মাঝে মিশিয়া গেল। আমি তখন খুজিতেছিলাম আমার ব্লগ ডট কমের স্টল এবং ব্লগারদের আড্ডাখানা।
কিন্তু বারবার ঘুরিয়া ও লোকদিগকে জিজ্ঞ্যেস করিয়া যখন হাল ছাড়িয়া দিয়াছি,তখন দেখিলাম যুবতীদের ন্যায় বড় বড় চুল বাবরী করিয়া পিছনে গিট দিয়া জটাকারে রাখা এক যুবক, সঙ্গে যুবকদের ন্যায় ছোট ছোট চুল কিনারে সিথি করিয়া জিন্টসের প্যান্ট এবং টি শার্ট পরিহিত একাবিংশ বয়সের যুবতী।
তাহাদের দেখিয়া আমার মনে হইল সবে পাবনার হাসপাতাল হইতে ছাড়া পাইয়াছে,হয়তো বা কিঞ্চিত পথ্য খাওয়াইলে বুঝি সারিয়া যাইবে!
কিন্তু বড় চুলের সেই যুবক যখন তার যুবতী বান্ধবীকে ব্লগ বিষয়ে কি যেন বলিল,তখন আমি কান খারা করিয়া শুনিলাম আর ভাবিলাম,এরা নিশ্চয়ই বলিতে পারিবে ব্লগারদের আড্ডা কোথায় হয়।
তাই যথারিতি সেই কথা জিজ্ঞ্যেস করিলাম।
যুবকটি বলিল যে উহা রবীন্দ্র মঞ্চের পাশেই। কিন্তু কোথায় সে কথা স্পষ্ট করিয়া না বলিয়া সে আমাকে বলিল ওই হোথা রবীন্দ্র মঞ্চ। অনেকখানি রবীন্দ্রনাথের ফটিক চরিত্রের ন্যায়।
আমি আবার খুজিতে লাগিলাম সেই ব্লগারদের আড্ডাস্থল। পথিমধ্যে আমার দৃষ্টিতে অন্যপ্রকাশ-এর স্টল পড়িল।
সেথায় দেখিতে পাইলাম আমাদের ইমদাদুল হক মিলন সাহেব দুইপাশে দুইজন অতিবসুন্দরী রমণী সঙ্গে করিয়া চ্যানেল আই,এটিএন বাংলা,একুশে টেলিভিষণ ইত্যাদি বিভিন্ন চ্যানেলে তাহার গগণবিদারী আর্তনাদ দিতেছেন শিশুদের নিয়া তাঁহার ভালবাসার উপন্যাস সম্বন্ধে।
ঠিক ওই সময়ে আমি সেই চারজন বাচ্চাগণকে একই সাথে দেখিতে পাইলাম অন্যপ্রকাশের স্টলের সহিত দন্ডায়মান অবস্থায়। সেথায় তাহারা অভ্যাসজনিত সুর তুলিয়া ভিক্ষা মাগিতেছিল অন্যপ্রকাশের কাছে।
এ সময় অন্যপ্রকাশ হতে দুজন লোক ছুটিয়া আসিয়া তাহাদের একজনকে ধরিয়া ফেলিল এবং বয়স্ক চোরদের যেইরূপে মারে ঠিক সেইরূপে আঘাত করিল।
বাচ্চাটি ছিল একটি মেয়ে। আঘাত পাইয়া সে মাগো বলিয়া বসিয়া পড়িল। কিন্তু লোকদুজন সেই আর্তনাদকে পাত্তা দিল না। মেয়েটিকে পা দিয়া দাবড়াইয়া স্টলের সামনে হতে সরাইয়া দিতেছিল। নতুবা নাকি তাহাদের কাস্টমারদের অসুবিধা হইবে!
আমার প্রচন্ড আশ্চর্য লাগিল। একপাশে ইমদাদুল হক মিলন সাহেব শিশুদের ভালবাসার জন্য টিভি মিডিয়ায় গলা চালাচ্ছেন। আর তারই পাশে পথের শিশুরা মার খাইয়া রাস্তায় লুটোপুটি খাইতেছে।
এতো সত্যি কি সহজ কথা!
এদের কারণে শিশুরা বাড়িয়া উঠিতে উঠিতে হিংস্র পৃথিবীর গহ্বর ছাড়া চোখে অন্য কিছু দেখিতে পায় না। বড় হইয়া এরাই হয় হিরোঞ্চি কিংবা দেশের একজন মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার। মেয়েগুলি হয়তো বা ঢাকার রাজপথের জাগ্রতরজনীর ভূমিকায় অভিনয় করিয়া পুরুষের মনোরঞ্জন নিবৃত করিতে সচেষ্ট হয়।
অথচ এই সমস্ত পথশিশুগুলি যদি সোনার চামচ মুখে লইয়া জন্মিত,তাহা হইলে হয়তো তারাই একদিন দেশের নেতা-নেত্রী,উকিল,ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হইত।
আমার মন হঠাৎ করিয়া ঝাড়া মারিয়া উঠিল। মনে হইল রাগের দমকে দমকে আমি বুঝি ফাটিয়া যাইব। সমগ্র পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি আমার মগজের ভিতর একসাথে লাফাইয়া উঠিল। ইচ্ছা করিল তাহাদের সব কটাকে ধরিয়া আজিমপুর কবরখানায় পুতিয়া আসি।
তারপর মনে হইল,এহারা সমাজের কথিত সম্মানের লোক!
ইহাদের কিছু করিলে আইন সভা করিয়া,পাবলিক জনপ্রিয়তাকে পুজি করিয়া আমার বারটা বাজাইয়া দিবে স্বল্প সময়ের ভিতর। তাই আমার মন প্রচন্ড খারাপ হইয়া গেল।
খানিকবাদে ভারাক্রান্ত মানষিকতায় হাটিয়া রবীন্দ্র মঞ্চ খুজিয়া পাইলাম। তাহার পাশেই আমার ব্লগ ডট কম।
কি আশ্চর্য! সেই স্টলে ওই বড় বড় বাবরী চুলের যুবতী বেশের যুবকটি বসিয়া আছে। সেকি আমায় বলিতে পারিত না যে ভাই আমি আমারব্লগ ডট কমের একজন সম্মানিত কর্মী। তাহলেই তো আর আমাকে আধাঘন্টা কষ্ট করিয়া মেলার লেজে লেজে ঘুরিবার প্রয়োজন হইত না।
সকলেই কি আজকাল ব্যবসায় কেন্দ্রীক হইয়া গেল নাকি?
হয়তো বা। তাইতো এক বছর পর বাংলা একাডেমীতে যাইয়া দেখিতে পাইলাম সেথায় সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার শুরু হইয়াছে সবে। এ হামলা চলবে প্রতি বছর,প্রতি ভাষার মাসে।


মোঃ আরাফাত হোসেন
মিরপুর-১,ঢাকা-১২১৬।
০১৬৭০১২৭৩২৮